আমফানে মৃত্যু বেড়ে ৮০, বেশিরভাগ এলাকায় নেই বিদ্যুৎ-জল

 

 আমফানের দাপটে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার রাতেই আমফান শক্তি হারিয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সারাদিনেও দুই জেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অবস্থাও খুব সঙ্গীণ। এই পরিস্থিতিতে এনডিআরএফ-
এর আরও চারটি দল রাজ্যে পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারের অনুরোধেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যে আমফানের জেরে মৃত্যু হয়েছে ৮০ জনের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গিয়ে জানিয়েছেন, ঝড়ের ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও দুই ২৪ পরগণার বিস্তৃর্ণ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ এলাকায় মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। সূত্রের খবর, ঝড়ের তান্ডবে প্রায় তছনছ হয়ে গিয়েছে বিস্তৃর্ণ এলাকা। হাজার হাজার গাছ শিকড় শুদ্ধ উপড়ে পড়েছে রাস্তায়। ফলে উদ্ধারকাজে গতি আসছে না। বুধবার দুপুরেই ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল দফতর। কিন্তু শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিস্তীর্ণ এলাকায় আসেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে পানীয় জল নেই পুরসভার কলে। পাম্প চালাতে না পারায় অনেক বাড়ি ও বহুতলে জল নেই একফোঁটা। একফোঁটা জলের জন্য কার্যত মাথা খুঁড়েছেন বিস্তৃর্ণ এলাকার বাসিন্দারা।  বিস্তৃর্ণ এলাকায় মোবাইলের টাওয়ার নেই, ফলে ফোনের লাইন ও ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু হয়নি শুক্রবারও। আবার  বিদ্যুৎ না আসায় মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বহু এলাকায়। এদিনও বহু এলাকায় এক বালতি জলের জন্য এলাকার টিউবওয়েলের সমানে আট থেকে আশির লম্বা লাইন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক দুরত্ব বিধি শিকেয় উঠেছে এই সমস্ত এলাকায়। ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষের অভিযোগ, করোনার জেরে স্বাস্থ্য-বিধি মানতে গেলে তো রান্না-খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিদ্যুতের লাইনে অসংখ্য গাছ পড়েছে। উপড়েছে বহু টাওয়ার, বিদ্যুতের খুঁটি। বসে গিয়েছে অসংখ্য সাবস্টেশন। ছিঁড়েছে হাই-টেনশন ও লো-টেনশন তার। তবে সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের দাবি, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ রাজ্যের উপকূলীয় এলাকা। তবে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য এলাকায় এখনও স্বাভাবিক হলনা কেন পরিষেবা? তাঁদের দাবি, এত বেশি গাছ পড়েছে যে, সেগুলো দ্রুত না-সরালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া কঠিন। সাধারণ মানুষের দাবি, বিদ্যুৎ দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই গাছ সরানোর কাজ চলছে ঢিমেতালে। বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রায় সর্বত্র বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুৎ-কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। বণ্টন সংস্থার আধিকারিকেরাও রিপোর্ট দিতে পারছেন না’। তবে তিনি এও জানিয়েছেন, ‘রাজ্য জুড়ে বিদ্যুৎ দফতরের প্রতিটি কর্মী প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করছে। বেশ কিছু জায়গায় পরিষেবা স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে। বাকি অংশেও তা দ্রুত স্বাভাবিক করার কাজ চলছে’। কিন্তু ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, সবকিছু স্বাভাবিক হবে কবে? প্রশাসন ঢিমেতালে চললে তাঁরা কোথায় যাবেন?

Post a Comment

Thank You for your important feedback

أحدث أقدم