![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgrFV7wh2jXQjUx1jSaw36FqDMYw4GsojyvjEAMSx9hG9lHZKxbszcrDfqSxtH3LeC7s4Ao-yTmTeJsiqpsElu4DMAq_VO5lsm7PFuVZ8Wb13yuZJMqd5iSCgFNmuVJD1f4Gis3fLhHQZ8/w640-h380/Screen-Shot-2020-09-27-at-4.54.14-PM-696x414.png)
ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য ত্রিপুরা। সবুজে মোড়া তার রাজধানী শহর আগরতলা। এর আগের পর্বে আমরা জেনেছিলাম আগরতলা ও আশেপাশের কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে। এবার একটু দূরের গন্তব্য সম্পর্কে জানবো।
রুদ্রসাগর ও নীরমহল –
রুদ্রসাগর ও নীরমহল ত্রিপুরার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। আগরতলা থেকে দূরত্ব ৫৩ কিলোমিটার। রুদ্রসাগর যেতে হলে আসতে হবে মেলাঘর শহরে। আগরতলা থেকে পাবেন প্রচুর বাস। মেলাঘর থেকে মাত্র ২ কিমি দূরেই বিশাল এক জলাশয় রুদ্রসাগর। স্থানীয়রা অবশ্য একে বলেন রুদিজলা। এই জলাশয়ের তীরেই রয়েছে ত্রিপুরার অন্যতম স্থাপত্যকীর্তি নীরমহল। ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য আট বছরে এই অসাধারণ মহলটি তৈরি করিয়েছিলেন। যদিও কালের করালগ্রাসে ও অবহেলায় কিছুটা চাকচিক্য হারিয়েছিল নীরমহল।
![](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/09/27165805/Screen-Shot-2020-09-27-at-4.52.02-PM-300x186.png)
নীরমহল
তবে বর্তমানে সরকারি প্রচেষ্টায় হারানো সৌন্দর্য্য ও গরিমা ফিরে পেয়েছে অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর এই প্রাসাদটি। এই প্রাসাদটি রুদ্রসাগরের দীঘির মাঝখানে অবস্থিত, যন্ত্রচালিত নৌকায় সেখানে পৌঁছাতে হয়। নৌকা ভাড়াও খুব সামান্য। তবে শীতকালে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি ভিড় করে রুদ্রসাগরে, ওই সময় এই জলাশয়ে নৌকা ভ্রমণ এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। নীরমহলের অপরূপ স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলীও দেখার মতো। তবে শনি-রবি ও যেকোনও ছুটির দিনে রঙিন আলোতে সেজে ওঠে নীরমহল। জলাশয়ের মাঝে সন্ধ্যের পর প্রাসাদটিকে দেখতে অপরূপ লাগে তখন।
![](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/09/27165906/Screen-Shot-2020-09-27-at-4.52.16-PM-300x195.png)
আলোক মালায় রাতের নীরমহল
উদয়পুর –
মূলত মন্দির ও দীঘির শহর বলেই পরিচিত ত্রিপুরার উদয়পুর। আগরতলা থেকে দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। উদয়পুর যাওয়ার জন্য আগরতলা থেকে প্রচুর বাস-গাড়ি পাওয়া যায়। উদয়পুরের প্রধান দ্রষ্টব্য অবশ্যই ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির। যা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির হিসেবেও পরিচিত। এটি ৫১ সতীপিঠের অন্যতম। বছরভর এই মন্দিরে ভক্তদের ঢল লেগেই থাকে। তবে দীপাবলিতে হয় বিশেষ পূজা, তখন এখানে তিল ধরানোর জায়গা থাকে না। কথিত আছে মহারাজা ধন্যমাণিক্য ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে একটি টিলার ওপর মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। দেবীমূর্তিটি তিনি চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে এসেছিলেন। পরবর্তীকালে এখানে মহারাজা কল্যাণমাণিক্য একটি দীঘি খনন করান, যার নাম কল্যাণসাগর।
![](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/09/27170000/Screen-Shot-2020-09-27-at-4.49.51-PM-300x176.png)
ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির
আর এই দীঘি খননের সময় মাটির নীচ থেকে আরেকটি দেবীমূর্তি পাওয়া যায়, সেটিও এখানে প্রতিষ্ঠিত। যাকে স্থানীয়রা ‘ছোট মা’ বলেই ডাকেন। উদয়পুরের আরেকটি প্রাচীন মন্দির হল ভুবনেশ্বরী মন্দির। গোমতী নদীর তীরে এই মন্দির মহারাজা গোবিন্দমাণিক্য নির্মাণ করিয়েছিলেন। জানা যায় এর নির্মাণকাল ১৬৬০ থেকে ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। জনশ্রুতি, একসময় এই মন্দিরে নরবলি দেওয়া হত। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বিসর্জন’ ও ‘রাজর্ষি’ উপন্যাস এই মন্দিরের পটভূমিকায় রচনা করেছিলেন। এছাড়া উদয়পুরে গুণবতী মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, গোপীনাথ মন্দির, ত্রিপুরেশ্বরী ভৈরব মন্দির, মহাদেব দীঘি, ধনী সাগর ঘুরে দেখতে পারেন।
![](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/09/27170028/Screen-Shot-2020-09-27-at-4.50.03-PM-300x183.png)
ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের দেবীমূর্তি
ছবিমুড়া –
বর্তমানে ত্রিপুরায় উগ্রপন্থী কার্যকলাপ নেই। ফলে এই রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে ফের স্বমহিমায় ফিরে এসেছে ছবিমুড়া। উদয়পুর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪০ কিমি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যেমন সুন্দর তেমনই প্রাচীন ভাস্কর্য। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা বিশাল বিশাল ভাস্কর্য আপনাকে অবাক করতে বাধ্য। ডম্বুর লেক থেকে বেরিয়ে গোমতী নদী ছবিমুড়া ও দেবতামুড়া নামে দুটি পাহাড়শ্রেণীর মধ্যিখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে। আর এই দুই পাহাড়শ্রেণীর খ্যাতি পাহাড়ের গায়ে অপরূপ ভাস্কর্যের জন্য। তবে ছবিমুড়ার ভাস্কর্য সবচেয়ে সুন্দর। যার ভাষায় বর্ণনা করা খুবই কষ্টসাধ্য। এখানে ছোট বড় নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়, যেটা নিয়ে ঘুরে দেখা যায় অপার বিস্ময়কর সব ভাস্কর্য।
![](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/09/27170203/Screen-Shot-2020-09-27-at-4.53.43-PM-300x198.png)
দশভুজা মূর্তি, ছবিমুড়া
ছবিমুড়ায় পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা আছে অসংখ্য দেব-দেবীর মূর্তি। যার মধ্যে বিশাল দশভুজা মূর্তিটি সবচেয়ে জনপ্রিয়। নদীর ধার ঘেঁষে খাড়াই পাহাড়ের ঢালে ১৫৮০ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই অভিনব ভাস্কর্যগুলি তৈরি হয়েছে বলেই মনে করেন ঐতিহাসিকরা। তবে প্রতি বছরই বর্ষার পর এই পাহাড়ে আগাছার জন্ম হয়, ফলে ভাস্কর্য দেখা যায়না। ফলে শীতকাল হল আদর্শ সময় এই অঞ্চলে আসার। এছাড়া গোমতীর জলে নৌকা বিহার করার মজাও কম নয়। দুধারে উঁচু খাড়াই পাহাড় জঙ্গলে পরিপূর্ণ, তাঁর মাঝেই অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। ছবিমুড়ায় নৌকা পাওয়া যাবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। একেকটি নৌকাতে ১০ থেকে ১২ জন বসতে পারবেন। ত্রিপুরার ভ্রমণ আবর্তিত হয় আগরতলাকে কেন্দ্র করেই / তাই এখান থেকেই কলকাতায় ফেরার ব্যবস্থা করা ভালো।
উনকোটি-
আগরতলা থেকে প্রায় ১৭৮ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ভারতের ‘এক আশ্চর্য’ জায়গা, যার নাম উনকোটি। তবে এই আশ্চর্যগুলি সম্পর্কে পর্যটকদের ধারণা প্রায় নেই বলেলেই চলে। ভারতে ঊনকোটির ইতিহাসও বেশ ধোঁয়াশা। আগরতলা থেকে গাড়িতে যেতে চার ঘণ্টারও খানিক বেশি সময় লাগে। মসৃণ রাস্তার দু’পাশে ঘন জঙ্গল। এটি মূলত একটা পাহাড়ি অঞ্চল, আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি থেকে বাইরে তাঁকালেই দেখা যাবে এক অসাধারণ দৃশ্য। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা পেল্লায় সাইজের নানা মুখ। ভাল করে দেখলে বোঝা যায়, সেগুলি বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীদের অবয়ব। আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি, কে বা কারা এই মূর্তিগুলি স্থাপন করেছিলেন।
![](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/09/27170342/Screen-Shot-2020-09-27-at-4.48.16-PM-300x214.png)
উনকোটির প্রবেশদ্বার
তবে, লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় ঊনকোটির বেশিরভাগ মূর্তিই এখনও জঙ্গলে ঢাকা। তবে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দৌলতে উনকোটি আজ ঐতিয্যের তকমা পেয়েছে। পাশাপাশি তোড়জোড় চলছে উনকোটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের (World Heritage Site) তকমা এনে দিতে। এখনও পুরাতাত্ত্বিকরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আরও মূর্তি ও স্থাপত্য খুঁজে বার করতে। সরকারি উদ্যোগে এখানে পর্যটনের প্রসার ঘটানো হয়েছে। চার পাশ দিয়ে সিঁড়ি করা হয়েছে, যাতে পর্যটকরা অনায়াসেই ঘুরে দেখতে পারেন। এখানকার মূর্তিগুলি প্রচলিত দেবদেবীর আদলে একেবারেই নয়। বরং স্থানীয় অধিবাসীদের (Tribals) মুখের আদলেই মূর্তিগুলি। উনকোটি নিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকটি পৌরানিক গল্প রয়েছে।
![](https://s3-ap-south-1.amazonaws.com/ctvn-bucket/uploads/2020/09/27170407/Screen-Shot-2020-09-27-at-4.48.30-PM-300x186.png)
উনকোটির মূর্তি
যারমধ্যে একটি হল মহাদেব-সহ এক কোটি দেবদেবী কাশীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। দেবাদিদেব নিজেই ছিলেন সেই যাত্রার নেতৃত্বে। ত্রিপুরার এই বনাঞ্চলে পৌঁছলে রাত নেমে আসে বলে, তিনি সকলকে এ স্থানেই বিশ্রামের জন্য আদেশ দেন। সঙ্গে এও বলেন যে, পর দিন সূর্যোদয়ের আগেই সকললে ঘুম থেকে উঠতে হবে। কিন্তু, ক্লান্ত দেবদেবীদের কেউই সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠতে পারেননি। অগত্যা, মহাদেব একাই রওনা দেন কাশীর পথে। তবে যাওয়ার আগে তিনি অভিশাপ দেন, যার ফলে সকল দেবদেবীই পাথরের হয়ে যান। উনকোটি দেখে ফিরে আসুন আগরতলা। এখান থেকে কলকাতা।
Post a Comment
Thank You for your important feedback