বিশ্ব পর্যটন দিবস, কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে পর্যটন শিল্প?

আজ অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস। কিন্তু চলতি বছর করোনা অতিমারীর জেরে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছে পর্যটন শিল্প। ফলে বিপুল পরিমান মানুষ, যারা পর্যটন ব্যবসা ও অন্যান্য কাজে যুক্ত তাঁদের হাল সবচেয়ে বেহাল। তাই এবছরের বিশ্ব পর্যটন দিবস অন্য মাত্রা নিতে চলেছে। বিশ্বে এখনও হানাদারি কমায় নি করোনা ভাইরাস। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্ব পর্যটন সেটা নিয়েই চলছে আলাপ-আলোচনা।
অজানাকে জানা, নতুন দেশ, স্থানের স্বাদ নিতে মানুষ দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। আর যারা দেশ-বিদেশ ঘুরতে, থাকা-খাওয়া, যাতায়াতের খরচ ও বিনোদনের কড়ি নিয়ে ঘুরতে যান তাঁদের টাকায় বিশ্বে বহু মানুষের পেট চলে। আর এই বিপুল সংখ্যক মানুষের রুজি রোজগারের পথ করে দেওয়ার জন্যই পর্যটন আজ শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (UNWTC) এই তারিখটি বিশ্ব পর্যটন দিবসের সূচনা করে সেই ১৯৭০ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানান কর্মকাণ্ডের সূচনা হয়েছিল। এরমধ্যে অন্যতম পর্যটনের প্রসার।
এই সময়ই গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বিষয়ক সংস্থা। পরবর্তীকালে যার নাম হয় বিশ্ব পর্যটন সংস্থা। পৃথিবীর অনেক দেশ শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটিয়ে জাতীয় অর্থনীতি সুদৃঢ় করেছে। ভারত সহ বহু দেশেই জাতীয় অর্থনীতিতে রয়েছে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে যেমন বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, তেমনই অর্থনীতির চাকাও ঘুরতে থাকে। কিন্তু একটি ভাইরাস পুরো পর্যটন শিল্পকেই ধ্বংস করে দেওয়ার উপক্রম করেছে বলে আক্ষেপ করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
সূত্র অনুযায়ী করোনা সংক্রমণের আগে পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ ঘুরতে বের হন। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতি সাত জন মানুষের একজন ট্যুরিস্ট বলা চলে। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনার হানা শুরু হয়। মার্চ থেকে যা মহামারীর দিকে গড়ায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায়, বাস, ট্রেন, উড়ানের মতো যাবতীয় গণপরিবহন। ধাক্কা খায় পর্যটন শিল্প। প্রায় ৬ মাসের লকডাউন ও সুরক্ষাবিধি কাটিয়ে কিছুটা শিথিল হয়েছে নিময়কানুন। দেশে শুরু হয়েছে আনলক পর্ব। ধীরে ধীরে চালু হয়েছে বাস, ট্যাক্সি, মেট্রো ও ঘরোয়া উড়ান পরিষেবা। যদিও এখনও বন্ধ যাত্রীবাহী ট্রেন ও আন্তর্জাতিক উড়ান। তবুও ধীরে ধীরে মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। ভারতে উৎসবের মরশুম আসন্ন, আর এই সময়টিই হল ভরা পর্যটনের মরশুম। ফলে কিছু সুরক্ষাবিধি লাগু করে খুলে দেওয়া হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলি। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলির আশা পুজো ও শীতে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এই শিল্প। তবে এখনও সেভাবে বুকিং শুরু হয়নি কোথাও।


২০২০ সালের বিশ্ব পর্যটন দিবসের মূল বিষয় হল ‘পর্যটন ও গ্রামীণ উন্নয়ন’। কৃষি, মৎস্য ও বনজসম্পদের বাইরে গ্রামীণ পর্যটনকেও তুলে ধরাই লক্ষ্য পর্যটন শিল্পের। এরফলে পর্যটনের নতুন নতুন দিক উন্মোচন হবে বলেই আশা করছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। পাশাপাশি তাঁরা মনে করছেন করোনা পরবর্তী সময়ে পর্যটনকে উৎসাহিত করতে চাই পর্যটনসংশ্লিষ্ট কর, চার্জ, শুল্ক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সহজ করা। এতে মানুষ ঘুরতে যাওয়ার উৎসাহ পাবেন। এই রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, এবার রাজ্যের মানুষ খুব একটা ভিন রাজ্যে ঘুরতে যাবেন না। তাই তাঁদের এই রাজ্যেই বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রেই যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। বিশেষ করে গ্রামকেন্দ্রীক পর্যটনে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর সহ কয়েকটি জেলায় পর্যটনের ব্যপক সুযোগ রয়েছে। এখন দেখার পুজোর মুখে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে কতটা উৎসাহিত হন বাঙালিরা।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post