বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে তৎপরতা দুই পক্ষেরই

বৃহস্পতিবার বিজেপি যুব মোর্চার নবান্ন অভিযান। কর্মসূচি সফল করতে মরিয়া বিজেপি, অপরদিকে ঠেকাতে তৎপর রাজ্য প্রশাসন। গতকালই নবান্ন দুদিন বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে রাজ্য। ওই দু’দিন সকল সরকারি কর্মী ও আধিকারিকদের নবান্নে আসতে বারণ করা হয়েছে। নবান্ন থেকে অবশ্য জানানো হয়, কোভিড সংক্রমণের প্রেক্ষিতে স্যানিটাইজেশনের জন্য ৮ ও ৯ অক্টোবর পুরোপুরি বন্ধ থাকবে নবান্ন। তাতেও দমেনি বিজেপি, শূন্য নবান্ন ঘিরতে হবে অভিযান, জানিয়ে দিলেন যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘আমাদের অভিযান হচ্ছে, হবে। এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই’। তবে রাজ্যের চালে নবান্ন অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভিযানের কৌশল ঠিক করতে বুধবার সন্ধ্যে থেকেই দফায় দফায় বৈঠক করেন যুব মোর্চার নেতারা। সন্ধ্যের মধ্যেই কলকাতা পৌঁছে যান বিজেপি যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য্য। পরামর্শ নেওয়া হয় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের থেকেও। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় শূন্য নবান্ন ঘিরতেই হবে অভিযান। চারটি মিছিল নবান্নের উদ্দেশ্যে রওনা হবে যথা সময়ে। যদিও সৌমিত্র খাঁ দাবি করেন, ‘নবান্নের ৭০ শতাংশ কর্মী এখন বিজেপির দিকে। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী ভয় পেয়েছেন। আমাদের মিছিলকে নবান্নে পৌঁছতে দেওয়া হোক বা না হোক, নবান্নে বিজেপির পতাকা উড়বেই’।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে আজ অবরুদ্ধ হতে চলেছে কলকাতা। এদিন বেলা ১২টা থেকে শুরু হবে নবান্ন অভিযান। মোট চারটি মিছিল কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন দিক থেকে নবান্নের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতির নেতৃত্বে মূল মিছিল শুরু হবে বিজেপির রাজ্য হেড-কোয়ার্টার থেকে। মিছিলটি সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড হয়ে হাওড়া ব্রিজ ধরে নবান্নের দিকে এগোবে। দ্বিতীয় মিছিল শুরু হবে হেস্টিংস থেকে। এই মিছিলে থাকবেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় এবং সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয় মিছিলটি যাবে দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে নবান্নের দিকে। তৃতীয় মিছিল শুরু হবে হাওড়া ময়দান থেকে। এই মিছিলেন নেতৃত্ব দেবেন যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য্য, সঙ্গে থাকবেন সৌমিত্র খাঁ। জিটি রোড ধরে নবান্নের দিকে এগোবে এই মিছিল। শেষ মিছিলটি শুরু হবে সাঁতরাগাছি থেকে, নেতৃত্ব দেবেন সায়ন্তন বসু এবং রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিজেপির নবান্ন অভিযান ব্যর্থ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে কলকাতা ও হাওড়া পুলিশ। প্রশাসনিক মহলে স্থির হয়েছে কোনও মিছিলই নবান্নের ধারেকাছে পৌঁছাতে দেওয়া হবে না। শুধু কলকাতাতেই প্রায় ২০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও হাওড়া ব্রিজের আগেই আটকে দেওয়া হবে মিছিল। অ্যালুমিনিয়াম ব্যারিকেড থেকে শুরু করে জলকামান সবই রাখা থাকবে। মিছিলের ওপর নজর রাখতে পুলিশ ব্যবহার করবে ড্রোন ক্যামেরা। যদি প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল এগিয়ে যেতে সক্ষম হয় তবে হাওড়া স্টেশনের কাছে তাঁদের আটকে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে হাওড়ার দিকের দুটি মিছিল আটকানোর জন্য ত্রি-স্তরীয় ব্যারিকেড রাখা হবে। মোট পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করে মিছিল রোখার চেষ্টা করবে পুলিশ। ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসার সহ প্রায় ২০০ আধিকারিক এবং হাজার দেড়েক পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে হাওড়ায়। অপরদিকে অভিযান সফল করতে সর্বশেষ লড়াই করবে বিজেপি কর্মীরা বলে জানিয়ে দিয়েছেন সৌমিত্র খাঁ। তাঁর হুঁশিয়ারি পরিস্থিতি অন্য দিকে গেলে দায় বর্তাবে রাজ্য প্রশাসনের ওপর।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post