বিহার নির্বাচনের ফলাফল কি ছাপ ফেলতে পারে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে? এই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে রাজ্যের আমজনতার আলোচনায়। এবারের বিহার ভোটের ফল পর্যালোচনা করে কয়েকটি বিষয়ে নজর কাড়ছে। বিশেষ করে তেজস্বী যাদবের উত্থানের পরও বিজেপির ভালো ফল চিন্তা বাড়াতে পারে তৃণমূলের। পাশাপাশি আসাউদ্দিন ওয়েইসির দলের ৫ এবং বামেদের সম্মিলিত ১৬ আসন রক্তচাপ বাড়াবে তৃণমূলের, এরকমই অভিমত বাংলার রাজনৈতিক মহলের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়েইসির মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (MIM) বিহারে মহাগঠবন্ধনের ভোটে শুধু ভাগই বসায়নি, উল্টে ২০টি আসনে লড়ে ৫টির দখল নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য তথ্য হল, এরমধ্যে তিনটিই আবার বিহার-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত লাগোয়া বিধানসভা কেন্দ্র। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, ওয়েইসির মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন ভোট কাটায় সুবিধে হয়েছে বিজেপির। এই রাজ্যেও আসন্ন বিধানসভা আসনে প্রার্থী দেবে বলে আগাম ঘোষণা করে রেখেছেন আসাউদ্দিন ওয়েইসি। আর তাঁরা যদি বিহারের মতই এই রাজ্যে ভোট কাটাকুটির অঙ্কে থাকে, তবে সমস্যায় পড়বে শাসকদল। আসল চিন্তার বিষয় হল ওয়েইসির দলের জেতা পাঁচটি আসনের অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের মালদা, উত্তর দিনাজপুরের লাগোয়া।
পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছরই বিধানসভা নির্বাচন। ভোট যথাসময়ই হবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে হাতে সময় কম। কিন্তু আসাউদ্দিন ওয়েইসির দল বিহারে যেভাবে বিহারে আরজেডি এবং কংগ্রেসের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েছে সেটা নিয়েই কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়তে বাধ্য তৃণমূল নেতাদের। পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বিহারের ২৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে মুসলিম ভোটার ছিল কমবেশি ৪০-৭০ শতাংশ। যা মূলত কংগ্রেস বা আরজেডি-র দখলেই থাকত। কিন্তু এই এলাকার ২৪টি আসনের মধ্যে এবার ১৫টির দখল নিয়েছে এনডিএ জোট। এর অন্যতম কারণ হল ওয়েইসির মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের ভোট কাটাকুটির খেলা।
অপরদিকে প্রতিবেশী রাজ্যে বামেদের অবিশ্বাস্য স্ট্রাইকিং রেটও ভাবাবে শাসকদলকে। বিহার নির্বাচনে মহাগঠনবন্ধনের সঙ্গী হয়ে বাম দলগুলি লড়েছিল ২৯টি আসনে। যারমধ্যে ১৬টি আসন দখল করেছে তাঁরা। এরমধ্যে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন ১৯টি আসনে লড়ে জিতেছে ১২টিতে। চার আসন লড়ে সিপিএম পেয়েছে ২টি এবং ছয় আসনে লড়াই করে সিপিআই পেয়েছে ২টি আসন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বামেদের সাফল্যের হার প্রায় ৮০ শতাংশ।
উচ্ছ্বসিত সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, বামেদের বাতিল বলে ধরে নেওয়ার দিন শেষ। এখানেই উঠছে প্রশ্ন, ভোট ময়দানে প্রায় হারিয়ে যাওয়া বামেরা কি এরাজ্যেও প্রভাব ফলতে পারবে? বর্তমানে ফের সংগঠন ঢেলে সাজিয়েছে বাম নেতৃত্ব। করোনা কালে কার্যত রাস্তায় নেমে জনসংযোগে জোর দিয়েছে তাঁরা। ফলে বিহারের মতো এই রাজ্যেও ভোট পেলে সমস্যায় পড়বে শাসকদল।
সবশেষে আসছে বিহারের বিজেপির উত্থান। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দলকেও ছাপিয়ে বিহারে এনডিএ জোটে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে বিজেপি। এমনকি তেজস্বী যাদবের আরজেডি-র সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে বিজেপি। যেখানে আরজেডি পেয়েছে ৭৫টি আসন, সেখানে বিজেপি দখল করেছে ৭৪টি আসন। এই দিক থেকে দেখলে বিহার ভোটে বিজেপির উত্থান উল্লেখযোগ্যই বটে।
বিহার বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির সরকারের সাফল্যই প্রতিফলিত হয়েছে বিহারের ইভিএমে। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যা প্রচার হয়েছিল তার কোনও প্রভাব পড়েনি ভোটে। এটাই বঙ্গ বিজেপিকে চাঙা করতে যথেষ্ঠ। সবমিলিয়ে এই কয়েকটি ফ্যাক্টর রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অনেকটাই প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেশকরা। এককথায় বিহার ভোটের ফলের এই পরিসংখ্যান রাজ্যের শাসকদলের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ঠ।
Post a Comment
Thank You for your important feedback