আজ দীপান্বিতা আমাবস্যায় কালীপুজোর রীতি। রাজ্যজুড়ে সর্বত্রই কালীপুজোয় মেতে ওঠেন বঙ্গবাসী। সার্বজনীন কালীপুজোর মাঝে এদিন রাজ্যের বিভিন্ন কালীমন্দিরে হয় বিশেষ পুজো। আর তাতেই মা কালীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয় বিশেষ ভোগ। সেখানে থাকে নানান পদ। প্রাচীন রীতি মেনেই ভোগ রান্না হয়ে থাকে রাজ্যের তিন অন্যতম কালীতীর্থে।
কিন্তু এবার পরিবেশটা একেবারেই আলাদা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে কালীপুজোয় জারি হয়েছে নানান বিধি-নিষেধ। সার্বজনীন পুজোয় নো-এন্ট্রি দর্শনার্থীদের। পাশাপাশি দক্ষিণেশ্বর, কালিঘাট এবং তারাপীঠের মতো কালীতীর্থে মন্দিরের পুজো হবে ভক্ত সমাগম ব্যাতিরেকে। কিন্তু যাবতীয় রীতিনীতি মেনেই হবে পুজো এবং ভোগ নিবেদন। আসুন জেনে নিন, এই তিন কালীতীর্থের পুজোর কিছু বিশেষ রীতি। এবং কী কী ভোগ নিবেদন করা হয় মা কালীকে।
দক্ষিণেশ্বর মন্দির-
কালীপুজোর ভোরে মা ভবতারিণীর বিশেষ আরতি দক্ষিণেশ্বরের পুজোর বিশেষ আকর্ষণ। এরপর হয় ঘট স্নান। মায়ের পুরোনো ঘটেই নতুন করে গঙ্গার জল ভরে প্রতিষ্ঠা করা হয় কালীপুজোর দিন। আজও দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণী ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের দেখানো পথেই পুজো পান। মায়ের ভোগও অতি সাধারণ। ভোগে নিবেদন করা হয় সাদাভাত, ঘি, পাঁচরকমের ভাজা, শুক্তো, তরকারি, পাঁচরকমের মাছের পদ, চাটনি, পায়েস ও মিস্টি। তবে এখানে কারণবারির (মদ) বদলে ডাবের জল দিয়েই মায়ের পুজো হয়।
দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী ঠিক যেন বাড়ির ময়ে। মাকে বাড়ির মেয়ের মতোই এদিন সাজানো হয়। বেনারসি শাড়ির পাশাপাশি সোনার অলঙ্কারে ভূষিতা করা হয় মা ভবতারিণীকে। সোনার বালা, বাউটি, বাজু, তাবিজ, গলায় মুক্তোর সাতনর, বত্রিশনর মালা, তারাহার ও সোনার মুন্ডমালা পড়ানো হয়। তবে করোনা আবহে এবার মায়ের এই রূপ দেখতে পাবেন না ভক্তরা।
তারাপীঠ মন্দির-
দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা হলেন মা তারা। তারা মূর্তি কালীমূর্তির থেকেও প্রাচীন তবে কালীর মতই ভীষণা। বীরভূমের তারাপীঠ সতীর একান্নপীঠের অন্যতম পীঠস্থান। এখানে সারাবছর দেবী মা তারা রুপে পুজো পেলেও কালীপুজোর দিন মা কালী রুপেই পুজিতা হন। এদিন মা তারাকে স্বর্ণালঙ্কারে রাজ রাজেশ্বরী বেশে দর্শন পাওয়া যায়। কালীপুজোর দিন অমাবস্যা তিথি মেনে গভীর রাতে নিশিপুজো হয় তারাপীঠে। তার আগে মাকে স্নান করিয়ে নতুন বেনারসী ও সোনার গহনায় সাজানো হয়।
এরপর তন্ত্রমতে পুজো হয়। এদিন দুবেলা অন্নভোগ দেওয়া হয় মা তারাকে। সেই বিশেষ ভোগে নিবেদন করা হয় খিচুরি, পোলাও, পাঁচ রকমের ভাজা, তিন রকমের তরকারি, মন্দিরের বলির মাংস, পোড়ানো শোল মাছ, চাটনি, পায়েস ও মিস্টি। সন্ধ্যাবেলায় আরতিতে লুচি ও মিস্টি নিবেদন করা হয় মা কালীকে। এখানেও এবার করোনার জেরে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
কালীঘাট মন্দির-
জনশ্রুতি অনুযায়ী কালীঘাট থেকেই কলকাতা নামের উৎপত্তি। সেইমতে কলকাতার প্রাচীন কালীতীর্থ হল কালীঘাট মন্দির। জানা যায়, একটি কষ্টিপাথরের শিলাখণ্ডই দেবীর রুপদান করা হয়েছে কালীঘাটের মন্দিরে। সতীর একান্নপীঠের অন্যতম এই কালীঘাটে কষ্টিপাথরের মূর্তির বেশ লম্বা জিহ্বাটি সোনা দিয়ে বাঁধানো। মুর্তির দাঁত ও মুকুটও সোনার। দীপান্বিতা কালীপুজোয় কালীঘাটের কালী পুজিতা হন মহালক্ষ্মী রুপে। তাই সারারাত এখানে মা লক্ষ্মীর আরাধনা হয় আর মা কালীকে বিশ্রাম দেওয়া হয়।
কালীপুজোর দিন মঙ্গল আরতির মাধ্যমে মাকে জাগানো হয়। এরপর অন্যান্য দিনের মতই এখানে নিত্যপুজো হয়। কালীপুজোর দিন এখানে বেলায় স্নান করিয়ে রাজবেশ পড়ানো হয় কালীঘাটের মাকে। এখানে মাকে বেগুনভাজা, পটলভাজা, কপি, আলু ও কাঁচকলা ভাজা, ঘিয়ের পোলাও, ঘি ডাল, শুক্তো, শাকভাজা, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস। তবে রাতে মা লক্ষ্মীকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় কালীঘাটে। লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, জ্বাল দেওয়া দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ থাকে কালীঘাটের ভোগে।
করোনা অতিমারীর জন্য বর্তমানে কালীঘাট মন্দির সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেল ৪টে থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। মন্দিরের অন্যতম সেবাইত বাবলু হালদার জানিয়েছেন, কালীপুজোর দিনও তেমনই চলবে।
إرسال تعليق
Thank You for your important feedback