কালীঘাটে কালীপুজোর দিন হয় মা লক্ষ্মীর আরাধোনা

কালীপুজোয় অনেক বাঙালি বাড়িতে হয় লক্ষ্ণীপুজো। কিন্তু জানেন কি, কলকাতার কালীঘাট মন্দিরেও কালীপুজোর দিন মা কালীকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে মা কালীকে মহালক্ষ্ণী রূপেই পুজো করা হয় কালীঘাট মন্দিরে। কিন্তু কেন? কারণ জানতে যেতে হবে সুদূর অতীতে। কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের ইতিহাস বহু প্রাচীন। 

 

কথিত আছে সুদূর অতীতে এই কালীঘাট মন্দির গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। এটি সতীর একান্ন পীঠের অন্যতম শক্তিপীঠ। লোকশ্রুতি অনুসারে, এক ব্রাহ্মণ গঙ্গার তীরে সন্ধ্যা আহ্নিক সেরে ফেরার সময় জঙ্গলের ভেতর এক আশ্চর্য আলো দেখে তার উৎস সন্ধানে গিয়ে কালীকুণ্ড নামে এক নদীর পাড়ে কালীর মুখের আকারের পাথরের টুকরো ও প্রস্তুরীভূত পায়ের আঙুল দেখতে পান। সেখানে এক অদ্ভুত মায়াবী আলোয় পরিপূর্ণ ছিল। পরে সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দির। আকবরের সেনাপতি মানসিংহ আত্মারাম ব্রহ্মচারি নামের ওই ব্রাহ্মণকেই ভার দিয়েছিলেন ওই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত মা কালীর পুজোর।


 

 

বর্তমানে কালীঘাটে আমরা যে মন্দির দেখি সেটি তৈরি করেছিলেন বরিসালের জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরীর পরিবার। সেটা ১৮০৯ সাল। এরপর বহুবার মন্দির গাত্র সংস্কার হয়েছে। কালীঘাটের কালীমূর্তি বেশ অভিনব। মূর্তিটির জিভ, দাঁত সোনায় বাঁধানো। পাশাপাশি মুকুট, হাত এবং মুণ্ডমালাটিও সোনার। তবে সতীর প্রস্তরীভূত যে অঙ্গটি পাওয়া গিয়েছিল সেটি মন্দিরের মধ্যেই একটি সিন্দুকে সযত্নেই রক্ষিত আছে। যেটি জনসমক্ষে কখোনই আনা হয়না।


তবে কালীঘাটের মন্দিরে কালীপুজোর দিন পুজো হয়না মা কালীর। এখানে মন্দিরের গর্ভগৃহেই দেবীমূর্তিকে মহালক্ষ্ণী রূপেই পুজো করা হয় দীপান্বিতা অমাবস্যায়। এই দিন মা কালী যেন ঘরের লক্ষ্মী। এখানে সন্ধ্যেবেলা হয় লক্ষ্মীর আরাধোনা। এটাই কালীঘাটের বহু প্রাচীন রেওয়াজ। রাতে মা লক্ষ্মীকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় কালীঘাটে। লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, জ্বাল দেওয়া দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ থাকে কালীঘাটের ভোগে। 

 

করোনা অতিমারীর জন্য বর্তমানে কালীঘাট মন্দির সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেল ৪টে থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। মন্দিরের অন্যতম সেবাইত বাবলু হালদার জানিয়েছেন, কালীপুজোর দিনও তেমনই চলবে।



Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post