জানুন লকডাউনে ভারতীয় রেল কীভাবে ’আত্মনির্ভর’ হয়ে উঠেছে

করোনা কালে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল রেল পরিষেবা। ন্যানো সাইজের করোনা ভাইরাস যখন সারা বিশ্বকেই আতঙ্কে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল তখন সকলের অলক্ষ্যে দেশের সেবায় নিয়োজিত হয়েছিল ভারতীয় রেল। আচমকা দেশজোড়া লকডাউনের জেরে সমস্যায় পড়েছিলেন কয়েক লাখ যাত্রী। অনেকেই আটকে পড়েছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে রেল। 

মার্চের শেষ দিকে শুরু হয় লকডাউন, ১ মে থেকে ভারতীয় রেল চালু করে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৬.১ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক এবং আটকে পড়া পর্যটকদের নিজের এলাকায় পৌঁছে দিয়েছে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন। এই যাত্রীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল ১.৮৫ কোটি খাবারের প্যাকেট এবং ২.২১ কোটি জলের বোতল। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সহ কয়েকটি রাজ্য শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, তবুও রেলের দাবি, ভাড়ার ৮০ শতাংশের বেশি ভর্তুকি দিয়েছে রেল। 


করোনা মোকাবিলায় ভারতীয় রেল মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল। রেলের দাবি, ৫,৬০১টি রেলের কামরা কোভিড আইসলেশন কোচে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যাতে স্বাস্থ্যকর্মী সহ চিকিৎসকদের থাকার ব্যবস্থাও ছিল। পাশাপাশি দেশের ১৭টি রেল হাসপাতালে পাঁচ হাজারের বেশি কোভিড বেডের ব্যবস্থা করেছিল রেলমন্ত্রক। এছাড়া রেল হাসপাতালের ৩০টি ব্লক কোভিড ব্লকে পরিণত করা হয়েছে। ফলে রেলকর্মীদের জন্য করোনা চিকিৎসায় কোনও সমস্যা হয়নি। এছাড়া রেলের দাবি, ভারতীয় রেলই বিশ্বের প্রথম কোভিড-সেফ কোচ তৈরি করেছে। এছাড়া ৫.৫ লাখ পিপিই কিট, ১.৪ লাখ লিটার স্যানিটাইজার এবং ২০ লাখ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ফেস মাস্ক সরবারহ করেছে ভারতীয় রেল কর্মীদের জন্য। 

শুধু করোনা মোকাবিলা নয়, লকডাউনের সুযোগে রেলকে সুরক্ষা ও আধুনিকীকরণের দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিভিন্ন স্টেশনে সুরক্ষা পরিকাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি রেল লাইন ও সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নতিকরণের কাজও সম্পন্ন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেল মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে রেলের গতি ও নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সাড়ে তিনশোরও বেশি বড় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে ওই সেকশনে ট্রেনের গতি বাড়বে।


রেলের দাবি, ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে রেল দুর্ঘটনায় একজন যাত্রীরও মৃত্যু হয়নি। এই সময়ের মধ্যে ১৩২টি রেলস্টেশনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছে রেল, ফলে বর্তমানে মোট ৬৩৫টি স্টেশন সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় চলে এল। রেল আরও জানিয়েছে, ৩২টি প্রকল্পের মোট ১,৩৫৩ কিলোমিটার কাজ এই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্যও সুখবর দিয়েছে রেলমন্ত্রক। ত্রিপুরায় ১১২ কিলোমিটার দীর্ঘ আগরতলা-সাব্রুম রেললাইনের কাজ হয়ে গিয়েছে। আবার লামডিং থেকে হোজাই পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবলিং প্রকল্পের কাজও ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। 

এই লকডাউনের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডাক দিয়েছিলেন ভারতকে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার। সেই মতো দেশীয় প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক্স লোকোমোটিভ উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে ভারতীয় রেল। রেলের বক্তব্য, বর্তমানে ভারতে ৯৫ শতাংশের বেশি দেশীয় প্রযুক্তির ইলেকট্রিক ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কাজ করছে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস ও বারাণসী লোকোমোটিভ ওয়ার্কস। দুমাসের কাছাকাছি কারখানা বন্ধ থাকার পরও উৎপাদন কমেনি। মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের অধীনে তৈরি ইলেকট্রিক ও ডিজেল ইঞ্জিনের উন্নতিসাধনও করা হচ্ছে। 


বন্দে ভারত ট্রেনের ৪৪টি কোচ তৈরি হয়েছে এই সময়ের মধ্যে। আবার বেনারস লোকোমোটিভ ওয়ার্কস শ্রীলঙ্কাকে ৭টি ডিজেল ইঞ্জিন রফতানি করে রেকর্ড গড়েছে। এলএইচবি কোচের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৪ শতাংশ। ১০০ শতাংশ কোচেই বায়ো টয়লেট বসানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ৯৬০টি বড় স্টেশন ও রেলের বিল্ডিংয়ের ছাদে ১০৫.৭ মেগাওয়াট সোলার প্যানেল বসিয়েছে রেল। পাশাপাশি ১০৩.৪ মেগাওয়াটের বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করেছে। 


Post a Comment

Thank You for your important feedback

أحدث أقدم