রাজ চক্রবর্তী কী পারবেন ব্যারাকপুরের অ্যাসিড টেস্টে উত্তীর্ণ হতে?

তিনি বহিরাগত, এই তোপ দেগে দলেরই ঠিক করে দেওয়া প্রার্থীকে পছন্দ নয় বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের তৃণমূল নেতাদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যারাকপুরের পুর প্রশাসক উত্তম দাস। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস একুশের ভোটে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতেই বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তারমধ্যে ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্র অন্যতম। এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন প্রার্থী চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। তারকা তথা জনপ্রিয় মুখকে প্রার্থী করে তৃণমূল নেত্রী হয়তো চেয়েছিলেন আসনটি নিশ্চিত করতে। কিন্তু তাঁরই তোলা বহিরাগত তত্ত্বে বিদ্ধ হলেন তিনি নিজেই।

 ব্যারাকপুরের প্রার্থী নিয়েও জ্বলে উঠলো ক্ষোভের আগুন। যদিও সেটা প্রশমিত করতে রবিবারই ময়দানে নামলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতারা। তাঁরা নতুন প্রার্থী রাজ চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে এলেন ব্যারাকপুরে। ছিলেন বিদায়ী মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের বিদায়ী খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ প্রমুখ। সটান গেলেন উত্তম দাসের ক্লাবেই। উত্তম দাস এবং বিরোধিতা করা অন্যান্য নেতাদের নিয়ে বসলেন জরুরি আলোচনায়। কিছুটা ক্ষোভ প্রশমিত হল বটে, কিন্তু রয়ে গেল কিছু ধোঁয়াশা। ফিরহাদ হাকিম ও রাজ চক্রবর্তী দুজনেই বোঝালেন তিনি বহিরাগত প্রার্থী নন মোটেই। পাশেই হালিশহরে তাঁর জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। ব্যারাকপুরের সঙ্গেও তাঁর আত্মিক যোগ রয়েছে। বরং সবাই মিলে কাজ করি। তবুও নিচু তলায় ক্ষোভের আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি। ব্যারাকপুরের আনাচে কানাচে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে সেই ক্ষোভের কথা। 


ব্যারাকপুরের বিদায়ী পুরপ্রধান উত্তম দাস দুদিন আগেই অভিযোগ করেছিলেন, দল তাঁকে যোগ্য বলে মনে করেনা। এমনকি এও প্রশ্ন তুলছিলেন, আবার কোন মীরজ়াফরকে প্রার্থী করা হল? তাঁকে টিকিট না দিয়ে বা ব্যারাকপুরের কোনও নেতাকে টিকিট না দিয়ে দল ভুল করেছে বলেও ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। দলের একাংশেরও একই বক্তব্য ছিল। এই পরিস্থিতিতে রাজ চক্রবর্তী, যিনি সেলিব্রেটি প্রার্থী কিন্তু রাজনীতিতে একেবারেই নবাগত তিনি কতটা সামলাতে পারবেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অপরদিকে ব্যারাকপুরের বিদায়ী বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত তৃণমূল ছেড়ে বর্তমানে বিজেপিতে। মুকুল ঘনিষ্ঠ এই নেতা একের পর এক সভা ও পরিবর্তন যাত্রা করে প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছেন। অপরদিকে বিগত লোকসভায় তৃণমূল এই কেন্দ্রে পিছিয়ে। সবমিলিয়ে সেলিব্রেটি রাজের মাথায় জয়মুকুট কি আদৌ শোভা পাবে? ব্যারাকপুরের মানুষ কি তাঁকেই বেছে নেবেন? এর উত্তর মিলবে আগামী ২ মে। আপাতত খেলা হবে ব্যারাকপুরে।


২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের শীলভদ্র দত্ত। তিনি নিকটতম সিপিএম প্রার্থী দেবাশিস ভৌমিককে ৭৩১৯ ভোটে হারিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভায় ব্যারাকপুর বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬৪,০৪৬ ভোট এবং তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬০,৫২৭ ভোট। মার্জিন ছিল ৩৫১৯ ভোটের। এবার ব্যারাকপুরের বিদায়ী বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত আবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাই এই আসনে তৃণমূলের কাছে অ্যাসিড টেস্ট। এই পরিস্থিতিতে নতুন প্রার্থীকে মনোনীত করেছে দল। স্থানীয় নেতৃত্ব এবং কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এই নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ চলছে। সবমিলিয়ে একুশের নির্বাচনে ব্যারাকপুর তারকা কেন্দ্র হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে।
 


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post