মরণোত্তর দেহদানের পথিকৃৎ ব্রজ রায়ের দেহের ‘প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি’ হল

নজির গড়ল কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই প্রথমবার কোনও করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হল। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি’। যার দেহের ‘প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি’ হল তিনি আবার যে সে ব্যক্তি নন, তিনি মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্রজ রায়। যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। তাঁর দেহই কাজে লাগল করোনা যুদ্ধের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রয়োজনে। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের সৌজন্যে দেহদান আন্দোলনের পথিকৃত সদা হাস্যময় মানুষটি প্রাপ্য মর্যাদা পেলেন বলেই মনে করছেন তাঁর সহকর্মীরা। 


একটা সময় কলকাতায় প্রচলিত ছিল একটি প্রবাদ, ‘মানুষ মরলে কে যায়? কাক, শকুন আর ব্রজ রায়’। সেই মানুষটির মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। করোনার ছোবলেই চলে গেলেন তিনি। তবে যে মানুষটা আজীবন মরণোত্তর দেহদানের জন্য লড়াই করে গেল সেই মানুষটার দেহই দান করা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কারণ কোভিডবিধি মেনে করোনা রোগীর দেহ দাহ করতে হয়। কারণ, করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর দেহই আর চিকিৎসার বিজ্ঞানের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। দেহদান আন্দোলনের প্রথমসারির সংস্থা ব্রজ রায়ের ‘গণদর্পণ’। এই সংস্থার সদস্যরা বেঁকে বসেন, কেন কোনও কাজে লাগানো হবে না ব্রজ রায়ের দেহ? প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এরপরই উদ্যোগী হয় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। অবশেষে চিকিৎসক ও প্রশাসনের উদ্যোগে  করোনা আক্রান্তের শরীরের ময়নাতদন্ত হল, যা মহাদেশেই এই প্রথম।


‘প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি’ কী? সাধারণ যে ময়নাতদন্ত করা হয় মৃতের দেহের, এই ‘প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি’ অনেকটা আলাদা। আর জি কর হাসপাতালের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ, ডাঃ সোমনাথ দাস জানালেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণ করতেই এই ময়নাতদন্ত করা হয়। এক্ষেত্রে দেখা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত ব্রজ রায়ের কোন কোন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোষে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কিনা অথবা কতটাই বা প্রভাব পড়েছে শরীরে। সেইসব খুঁটিনাটি জানতেই এক ঘণ্টার ময়নাতদন্তের পর কোষ সংগ্রহ করেছেন চিকিৎসকরা। করোনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব অসীম বলেই জানালেন তিনি। ডাঃ সোমনাথ দাস আরও জানালেন, গোটা পূর্ব ভারতে করোনা-পর্বে এই ঘটনা আমাদের চোখে পড়েনি। এমনকি ভারতের কোনও এইমস-ও এই প্যাথোলজিক্যাল অটোপ্সি করছে বলে শুনিনি। রিপোর্টটা প্রকাশিত হলে করোনা চিকিৎসার একটি নতুন দিক উন্মোচিচ হবে।


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post