কোনটা নদী-কোনটা গ্রাম, বোঝাই দায়

 
কারণ হাজার হাজার গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তা থেকে সরিয়ে একেকটি এলাকায় প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিরা ঢুকতেই লেগে গিয়েছে ৪-৫ দিন। দক্ষিণ ২৪ পরগণার উপকূলবর্তী এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। যেমন, সাগর, কাকদ্বীপ, ক্যানিং, গোসাবা প্রভৃতি এলাকা। গাছ ভেঙে পড়া, ঘরের চাল উড়ে যাওয়া, মাটির বাড়ি ধ্বসে যাওয়ার ঘটনা তো আছেই। সেইসঙ্গে নদীবাঁধ ভাঙার ঘটনাও কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সাধারণ মানুষের। সুপার-সাইক্লোন আমফানের দাপটে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কোনটা নদী আর কোনটা যে গ্রাম সেটাই বোঝা দায়। নদীর সঙ্গেই গ্রামে দেখা যাচ্ছে জোয়ার-ভাঁটা। পাঁচদিন পরও বিস্তৃর্ণ এলাকায় নদীবাঁধ মেরামত করতে পারেনি সেচ দফতর। 
ফলে জলের তলায় বহু ঘর-বাড়ি, গোয়ালঘর, চাষের মাঠ, সবজির ক্ষেত, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল। জলমগ্ন গ্রামের পর গ্রাম। বিশেষ করে গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া, পুঁইজালি, কালিদাসপুরের অবস্থা খুবই খারাপ। কোথাও কোথাও কোমর জল তো কোথাও বুক জলে ডুবে রয়েছে বাড়িঘর। বাঁধ ভাঙায় বেশিরভাগ জিনিষপত্রই নদীর জল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু পরনের কাপড়টুকু ছাড়া বাঁচানো যায়নি কিছুই। মগরাহাট-১ ব্লকের উত্তর কুসুম গ্রাম পঞ্চা‌য়ে‌তের ব‌রিজপুর গ্রামে ১১২টি বা‌ড়ি ভে‌ঙে‌ছে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের পেশা বল‌তে চাষ অাবাদ। খুশির ঈ‌দ তাই এখন বিষাদে পরিনত হয়েছে এই এলাকার বাসিন্দাদের। 
ক্যানিং-পূর্ব বিধানসভার তাম্বুলদহ ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ গ্রামেই মাতলা নদীর বাঁধ ভেঙেছে।  প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। বেশিরভাগ বাড়ি ভেঙে পড়েছে, চাষের জমি ও মিস্টি জলের পুকুরে নোনা জল ঢুকে পড়েছে। প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরে। অভিযোগ, শুকনো খাবার ও পানীয় জল টুকু নেই। সোমবার বিধায়ক শওকত মোল্লা ঘুরে দেখেন এলাকার পরিস্থিতি। সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন ও তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দেন। এখানে পানীয় জল ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা যায় তারজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসককে। 
অপরদিকে বাঘের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশের মানুষ। একদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক, এর ওপর ঘূর্ণিঝড় আমফানের জেরে ভিটেমাটি হারিয়েছেন অধিকাংশ মানুষ। সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির আশেপাশে বিশেষ জাল দিয়ে ঘেরা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে বেশিরভাগ জায়গায় ওই জালের দফারফা হয়েছে। ছিঁড়েছে জাল বা খুঁটি উপড়ে ভূপাতিত বিস্তৃর্ণ এলাকার রক্ষাকবজ। ফলে জঙ্গল থেকে যেকোনও মুহূর্তে বেড়িয়ে লোকালয়ে চলে আসতে পারে রয়াল বেঙ্গল টাইগার। খুবই ভয়ে-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, ঝড়খালি বন দফতরের কর্মীরা এখনও এই জাল মেরামতের কাজে হাত লাগায়নি। এর ওপর ঝড়খালি এলাকায় এখনও আসেনি বিদ্যুৎ। তাই সন্ধ্যে হলেই নেমে আসছে আঁধার। আর অন্ধকারেই বাঘের ভয়। কারণ দক্ষিণরায় অন্ধকারেই লোকালয়ে চলে আসতে পারে। আতঙ্ক কাটছে না সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামগুলির। 

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post