আবদুলের এক্কাগাড়ি

এরপর এক্কাগাড়ির ভেতর থেকে চাল, ডাল, তেল, সয়াবিন সহ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছেন ইটাহার ব্লকের ভাগরোইল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার। পেশায় যিনি পঞ্চায়েত কর্মী। লকডাউনের এই চরম অসহায় অবস্থায় দুঃস্থ মানুষের মধ্যে পরিত্রাতা হয়ে উঠেছে আবদুল ভাইয়ের এক্কাগাড়ি।
 কিন্তু হঠাৎ মোটর বাইক না কিনে লক্ষাধিক টাকা দিয়ে ঘোড়া কেনার শখ জাগলো কেন আবদুল সাত্তারের? প্রশ্ন করতেই জানা গেল বছর পাঁচেক আগে স্ত্রী গোলাবানু বেগম খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক -হাকিমের কাছে ছুটেও অসুখ সারছিল না। সেসময় এক পীরবাবার পরামর্শে ঘোড়া কিনে ফেলেন আবদুল সাহেব। এর কিছুদিন পর থেকেই ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করেন স্ত্রী। ব্যাস, এখান থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার বাসনা জেগে ওঠে আবদুল সাহেবের মনে। গ্রামের কারও বিয়ে বা অসুস্থ রোগীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে গ্রামবাসীদের ভরসা আবদুলের ঘোড়ার গাড়ি। 
বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতিতে নিয়মিত দুঃস্থ মানুষদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিলি করে চলেছেন তিনি। কখনও বাড়ি থেকে, কখনই বা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আবদুল সাহেব পৌঁছে যান পাশের গ্রামে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুরু হয় ত্রাণবিলির কাজ। সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় কী কী করা উচিত তাও প্রচার করেন সমানতালে। আবদুল সাত্তার বলেন, স্ত্রী সুস্থ হয়ে ওঠার পর থেকেই মানুষের জন্য কাজ করি। এই লকডাউনে মানুষের খুব কষ্ট। তাই সাধ্যমতো তাদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, পোশাক বিলি করছি। ভালো লাগে। আমি নেতা হতে চাই না। শুধু মানুষের কাজ করে যেতে চাই। 
আবদুল সাত্তারের এই মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা বলেন, আব্দুল ভাই খুব বড়ো মাপের মানুষ। মানুষের পাশে থাকেন সবসময়। ঠিক এভাবেই আবদুল ভাইয়ের এক্কাগাড়ি মাইলের পর মাইল ছুটে চলে মানবিকতার বার্তা নিয়ে। ঘোড়ার খুরে খুরে ধুলো ওড়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post