জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ, বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তাল কলকাতা-হাওড়া

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সকলেই মনে করছিলেন বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হতে চলেছে কলকাতা। পুলিশ প্রশাসনও প্রস্তুত ছিল পুরোদমে। জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, অ্যালুমিনিয়াম ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকানোর সব প্রস্ততি রেখেছিল পুলিশ। সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, হেস্টিংস ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে চারটি মিছিল যথা সময়ে রওনা দেয়। কিন্তু নবান্নের বহু আগেই মিছিলগুলি আটকায় পুলিশ। শুরু হয় পুলিশ-বিজেপি কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ।

কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে মধ্য কলকাতা। অপরদিকে হাওড়া ময়দান, সাঁতরাগাছি, আন্দুল রোড, ডানকুনি টোল প্লাজাতেও ধুন্ধুমার বাঁধে। পুলিশের ব্যপক লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন বহু বিজেপি কর্মী সমর্থক। আহত হয়েছেন বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাত। ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান সাংসদ অর্জুন সিং, বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। পরে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। শেষে মিছিল ঠেকাতে না পেরে ব্যপক লাঠিচার্জ করে প্রতিটি মিছিলই ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। মোট চার হাজার পুলিশ এদিন মোতায়েন করেছিল রাজ্য প্রশাসন।

 

বেলা ১২টার কিছু পরে হাওড়া ময়দান থেকে বিজেপি যুব মোর্চার নবান্ন অভিযান শুরু হল। এদিন বেলা ১২টা ০৭ মিনিটে মিছিল শুরু হয়। মিছিলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপি যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য। রয়েছেন রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। কিছু সময় পরই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিইউ থেকেও শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় মিছিলটি। এই মিছিলের নেতৃত্বে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সকাল থেকেই এদিন মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে ভিড় ছিল বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। সাঁতরাগাছি থেকে শুরু মিছিল। নেতৃত্বে সায়ন্তন বসু, জ্যোর্তিময় মাহাতো ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। এরমধ্যেই বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, ‘বিজেপির গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ আটকাচ্ছে।

মিছিলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ। সাঁতরাগাছিতে পুলিশ মিছিল আটকাতে প্রথমে জলকামান ব্যবহার করে। কিন্তু ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করে বিজেপি নেতারা। এরপরই লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসও। মিছিল থেকে পাল্টা পাফরও ছোঁড়া হয়। অসুস্থ হয়ে পড়েন বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। অপরদিকে হাওড়া ময়দান এলাকায় মিছিল লক্ষ্য করে বোমা মারার অভিযোগ উঠেছে। এখানেও অশান্ত হয়ে ওঠে এলাকা। একদিকে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস এবং অন্যদিকে মিছিলে বোমা পড়ার অভিযোগ। একটি বহুতলের ছাদ থেকে বোমা মারার অভিযোগ উঠছে।

আহত রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রশাসন নির্ভর হয়ে পড়েছে এই সরকার। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যোগ দিতে বিজেপি কর্মীরা যাচ্ছে। আমরাও যাচ্ছি। যেখানে আটকাবে আটকে যাব’। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এদিনও তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল সরকারকে। তাঁর কটাক্ষ, ‘দুর্নীতিমুক্ত করতে পুরো রাজ্য সরকারের স্যানিটাইজেশন হোক। রাজ্য সরকার ঘাবড়ে গিয়েছে। বেহালা, ভবানীপুর, ডানকুনিতে বিজেপি কর্মীদের আটকেছে পুলিশ। লাঠিচার্জ করছে। তৃণমূল কার্যকর্তাদের মতো কাজ করছে পুলিশ। তৃণমূল সরকার ঘাবড়ে গিয়েছে। গণতন্ত্র বাঁচাও, বাংলা বাঁচাওয়ের দাবিতে এই আন্দোলন চলবে’।

দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, কলকাতাকে গোটা দেশের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরদিকে হেস্টিংস মোড়ে দ্বিতীয় সেতুতে ওঠার মুখেই পুলিশের ব্যারিকেড। হেস্টিংসের মিছিলকে আটকায় পুলিশ। জলকামান থেকে জল ছেটানো হয়। লাঠি উচিয়ে মিছিলকে তাড়া করে পুলিশ। মিছিল থেকেও পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।

 

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post