কাটোয়ার কেতুগ্রামের 'বহড়ান' গ্রামের ডাকাত কালীপুজো প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। 'বহড়ান' গ্রামের শেষপ্রান্তে চারদিকে গাছপালায় ঘেরা প্রাচীন এক পাকুড় গাছের নিচে পাকা বেদীর উপর বাঁধানো ছবিতে অধিষ্ঠিতা এই ডাকাত কালী। দীপাবলির কালীপূজা ছাড়াও গ্রাম্য দেবী হিসেবে পূজিতা হন সারা বছরই। প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শনিবার সহ প্রতি মাসের অমাবস্যাতেও প্রচুর মানুষজন এখানে আসেন এই ডাকাত কালীর মায়ের পুজো করাতে। দীপাবলির সময় শুধু এই গ্রামের মানুষজনেরাই নন, আশেপাশের অনেক গ্রাম সহ ভিন জেলা থেকেও প্রচুর মানুষজন আসেন কার্তিক মাসের অমাবস্যার এই ডাকাত কালীর পুজোয়।
কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে 'বহড়ান' গ্রামেরই এক বাসিন্দা ভয়ঙ্কর ডাকাত পরেশ হাজরা এই কালীপুজো শুরু করেছিলেন। অতীতে এখানে ঘন জঙ্গলের মধ্যে ঘটে পুজো করে এই কালী মায়ের সাধনা করতেন তিনি। তারপর পূজা শেষে ডাকাতি করতে রওনা দিতেন। তারপর কালের নিয়মে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে দীপাবলির সময় মাটির মূর্তি গড়ে এই ডাকাত কালীপুজো হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। গ্রামবাসীরা সকলে মিলে একত্রিত হয়ে প্রতি বছরই খুব নিষ্ঠা এবং ধুমধামের সাথে এই ডাকাত কালী মায়ের পুজো চালিয়ে আসছেন সবাই।
এই কালীপুজোর প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কালীর পুজোর দিন রাত্রে গ্রামেরই ওই হাজরা পরিবারের বাড়ি থেকে পূজার জন্য নৈবেদ্য এবং বলিদানের জন্য চুরি করা চালকুমড়ো না নিয়ে আসা পর্যন্ত এই ডাকাত কালীর পুজো শুরু করা যায় না। গ্রামের হাজরা বাড়ি থেকে পূজার অর্ঘ্য আসার পরই তারপর এই পুজোর জন্য ঘট ভরতে যাওয়া হয় পুকুরে এবং পুজোও শুরু হয় তারপর।
এই ডাকাত কালীর পুজোতে ছাগ বলির প্রথাও রয়েছে। কালীর পুজোর রাতে পুজোর রীতি অনুযায়ী ও ভক্তদের দেওয়া মানসিকের জন্য ৮০ থেকে ১০০টির মতো ছাগ বলি হয় প্রতিবছরই। পুজোর পরদিন দুপুরে বিশাল এক ভাণ্ডারার আয়োজন করা হয় গ্রামের পূজা কমিটির পক্ষ থেকে। যেখানে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ এই মহোৎসবের প্রসাদ গ্রহণ করেন। তবে এবছর দীপাবলির সময় করোনা বিধি মেনে শুধুমাত্র এই ডাকাত কালীর পূজার্চনা ছাড়া অন্য কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে না বলে মন খারাপ গ্রামবাসীদের একাংশের।
Post a Comment
Thank You for your important feedback