মালদায় গঙ্গার ভাঙনই এবার ভোটের ইস্যু

 

প্রতি বছরই বর্ষা আসে, আর গঙ্গা তাঁর দুই পারের কিছুটা অংশ নিজের গর্ভে নিয়ে যায়। বছরের পর বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে মালদা জেলার অধিকাংশ অঞ্চলে। ভোট এলেই রাজনৈতিক নেতারা ভাঙন প্রতিরোধের ইস্যু তোলে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না বলেই দাবি এলাকাবাসীদের। এবার আসন্ন বিধানসভা ভোট। ফলে নদী ভাঙন নিয়ে ফের সরব বিরোধী দলগুলি। শাসকদলের নেতারাও মানছেন গঙ্গার ভাঙন এবার মালদা জেলার মূল ইস্যু হতে চলেছে।


মালদা জেলার রতুয়া, কালিয়াচক এবং মানিকচক এলাকা গঙ্গার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কালিয়াচক ২ ও ৩ নম্বর ব্লক এবং মানিকচক ব্লকের সিংহভাগই নদীর গ্রাসে যেতে বসেছে। প্রতি বছর নিয়ম করে বর্ষার সময় নদী পারের অনেকটা অংশই গঙ্গার গ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে। কেউ কেউ আবার তল্পিতল্পা গুটিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে মাথা গুজেছেন। কিন্তু গঙ্গার ভাঙন প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি রাজ্য সরকার। ফলে একটা চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এই সমস্ত এলাকায়। এই নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। 

 মানিকচকের অশতিপর বৃদ্ধা আসিয়া বিবি যেমন চিন্তায় একমাত্র সম্বল এক চিলতে ঘরটি নদীর গ্রাসে চলে গেলে ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনিদের নিয়ে কোথায় গিয়ে উঠবেন তা নিয়ে। দিনমজুর পরিবারে মাথা গোঁজার আশ্রয় বলতে ওই টালির ছাউনি দেওয়া এক চিলতে দরমার ঘরটিই। এলাকারই নুরুল হক, সত্যনারায়ণ চৌধুরীরা জানাচ্ছেন, দিনরাত আতঙ্কের কাহিনী। নরুল হক জানালেন, দিনভর বাড়ি পাহাড়া দিতে হয়, কখন নদী এগিয়ে আসে। রাতে পরিবারকে স্কুলঘরে পাঠিয়ে আমরা সকলেই রাত জাগি। একই বক্তব্য, সত্যনারায়ন চৌধুরী এবং সেখ রসুলের। তাঁরাও চিন্তায় বাড়ি ভাঙনে তলিয়ে গেলে কোথায় আশ্রয় নেবেন। তাঁদের একযোগে দাবি, প্রতিবার ভোট আসে, প্রতিশ্রুতিও আসে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়না।


মালদা জেলা বিজেপির সভাপতি গোবিন্দ্রচন্দ্র মণ্ডলের কথায়, কেন্দ্রের টাকা হজম করে নিচ্ছে শাসকদলের নেতারা। তিনি দাবি করেছেন, ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা পাঠালেও কিছু আধিকারিক ও কন্ট্রাক্টারদের যোগসাজস কাজের নামে সেই টাকা লুটপাট করছে। নদী ভাঙনকে তাঁরা উৎসবে পরিণত করেছে। বর্ষা আসলেই গঙ্গায় ভাঙন হবে, আর তাঁরা কোটি কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ পাবে। জেলা বিজেপি সভাপতির আরও অভিযোগ, ১৯৭১ সাল থেকে একই বোল্ডার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে লোক দেখানো কাজ করে এলাকার মানুষদের ঠকাচ্ছেন এক শ্রেণীর আধিকারিক ও শাসকদলের নেতারা।


  মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল ভাঙনের সমস্যাই যে মূল ইস্যু সেটা মেনে নিয়েছেন। তবে তাঁর ব্যাখ্যা, মালদা জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন এককভাবে এই ভাঙন প্রতিরোধ করতে পারবে না। এরজন্য দরকার কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ প্রকল্প। আমরা পুরো বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি। তবে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, বিক্ষিপ্তভাবে রাজ্য সরকার ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করেছে। তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। পুরোপুরি সমাধান হলে ভালো হত। এই টানাপোড়েনের মাঝেই ফের একবার বিধানসভা ভোট আসন্ন। ফলে এই ভাঙন ইস্যুতে বিজেপি সহ বিরোধী দলগুলি প্রচারের ঝাঁঝ ইতিমধ্যেই বাড়িয়েছে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post