লক্ষ্মী ভালো ছেলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর, তবুও অশনি সঙ্কেত হাওড়ায়

প্রথমে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, পরে সাংসদ প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায়, এবার লক্ষ্মীরতন শুক্লা। হাওড়ায় শাসকদলের কাছে এ যেন অশনি সঙ্কেত। বিগত কয়েকমাস ধরেই বেসুরো রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা। মঙ্গলবার একসঙ্গে দুটি পদ ছাড়লেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার তথা বাংলার ক্রিকেটের নক্ষত্র। একইসঙ্গে মন্ত্রিত্ব এবং হাওড়া জেলা সভাপতি পদেই ইস্তফা দিলেন লক্ষ্মী। মন্ত্রিপদে ইস্তফা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই, আর সংগঠনের দায়িত্ব ছাড়ার চিঠি দিয়েছেন সুব্রত বক্সিকে। 

কিন্তু রাজনৈতিক মহলের অভিমত, একুশের ভোটের আগে রক্তচাপ বাড়বে শাসকদলের নেতাদের। মঙ্গলবার হাওড়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে গরহাজির থাকলেন হাওড়ার সাংসদ প্রসুন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক বৈশালি ডালমিয়া, মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা। ছিলেন না বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়। ওই অনুষ্ঠানের পর লক্ষ্মীরতনের অনুপস্থিতি নিয়ে সাফাই দিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছিলেন, সৌরভের অসুস্থতার কারণেই ব্যস্ত লক্ষ্মী, তাই আসতে পারেননি। কিন্তু এর কিছু সময় পরই জানা যায় লক্ষ্মী দুটি পদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে হাওড়ার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ছিলই না ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে। 

এক্ষেত্রে ফিরহাদের সাফাই, রাজীব হাওড়া গ্রামীন এলাকার বিধায়ক, তাই এই অঞ্চলের অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত নন। অথচ হাওড়া কর্পোরেশনে তৃণমূল বোর্ড ভেঙে যাওয়ার পর যে পরিচালন সমিতি গঠন করা হয়েছিল সেখানে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই হাওড়া কর্পোরেশনের পানীয় জল প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই নেই রাজীবের নাম। নেই হাওড়া বালির বিধায়ক বৈশালি ডালমিয়ার নাম। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, মন্ত্রী অরূপ রায়ের সঙ্গে একেবারেই ভালো সম্পর্ক নয় এদের। মূলত অরূপের ওপরই ক্ষোভ ছিল লক্ষ্ণীর। কারণ খাতায় কলমে জেলা সভাপতি থাকলেও লক্ষ্মীর কোনও ক্ষমতা ছিল না বলেই জানা যাচ্ছে। এদিন লক্ষ্মীরতন পদত্যাগ করার পরই তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না অরূপ রায়। অরূপের কথায়, ‘এই মুহূর্তে দল ছাড়ার মানে হল, রনাঙ্গণ থেকে সেনাপতির পালিয়ে যাওয়া’। 

অপরদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন লক্ষ্মীর পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর বলেন, ‘যে কেউ ইস্তফা দিতে পারেন, সে (লক্ষ্মীরতন শুক্লা) আমাকে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছে। সে ক্রীড়াক্ষেত্রে এবং বিধায়ক হিসেবে আরও সময় দিতে চান। এটাকে অন্যভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তা বলে জল্পনা থামার লক্ষণ নেই। বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, লক্ষ্মী ইস্তফা দিয়েছে মন্ত্রিত্ব এবং তৃণমূলের সংগঠনিক পদ থেকে, রাজনীতি ছাড়ছেন এরকম কথা শুনিনি। তবে কি এবার আরও ভাঙন তৃণমূলে? উত্তর সময়ই দেবে।  


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post