সপ্তাহে চারদিন কাজ, তিনদিন ছুটি, প্রস্তাব নতুন কেন্দ্রীয় শ্রমবিধিতে

নতুন শ্রমবিধির ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় শ্রম ও নিয়োগ সচিব অপূর্ব চন্দ্র। এই খসড়া প্রস্তাবে বেশ কয়েকটি চমকপ্রদ দিক রয়েছে। যেমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সপ্তাহে ৪ দিন কাজ করলে তিনদিন সবেতন ছুটি পাবেন সংস্থার কর্মীরা। এই খসড়া প্রস্তাবটি আগামী সপ্তাহেই কার্যকর করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সচিব। ঠিক কী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে নতুন শ্রমবিধিতে? জানা যাচ্ছে, এই নতুন শ্রমবিধি সপ্তাহের কাজের দিন পাঁচদিনের পরিবর্তে চারদিনেও নামিয়ে আনা যাবে। তবে এক্ষেত্রে বেশি সময় কাজ করতে হবে কর্মীদের। কারণ এই শ্রমবিধিতেও সপ্তাহিক ৪৮ ঘন্টা কাজের বিধি কমানো হয়নি। ফলে সেইমতো যদি কেউ সপ্তাহে তিনদিন ছুটি নিয়ে চারদিন কাজ করতে চান, তবে তাঁকে ১২ ঘন্টা কাজ করতে হবে প্রতিদিন। সেক্ষেত্রে ওই কর্মচারীকে তিনদিন সবেতন ছুটি দিতে হবে ওই সংস্থাকে। 

তবে এই নতুন শ্রমবিধি বাধ্যতামূলক নয় বলেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমসচিব। তিনি জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ এবং কর্মীচারীরা চাইলেই এই নতুন বিধি কার্যকর করা যাবে। তিনি জানিয়েছেন, কাজের দিন সপ্তাহে চারদিন, পাঁচদিন বা ছয়দিনও করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে দৈনিক কাজের সময় কমবে বা বাড়বে। সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা হিসেব ধরেই দৈনিক কাজের সময় ঠিক হবে এক্ষেত্রে।  

সূত্রের খবর, এতদিন শিল্পক্ষেত্রে যতগুলি আইন ছিল এবার সেগুলি কয়েকটি বৃহত্তর গুচ্ছে বেঁধে ফেলা হল। যেমন, বেতন সংক্রান্ত বিধিটি দেশের সমস্ত শ্রমিকের জন্যই প্রযোজ্য। প্রস্তাবিত বিধিতে, এবার শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের নূন্যতম বেতন নির্ধারণ করবে। অর্থাৎ দেশের ভৌগোলিক এলাকার ভিত্তিতে নূন্যতম বেতন ঠিক হবে। যদিও সেটা ঠিক করার আগে কেন্দ্রীয় সেন্ট্রাল অ্যাডভাইজারি বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করতে হবে। এরপর যদি কোনও সংস্থা বা নিয়োগকর্তা এই সংক্রান্ত বিধি ভঙ্গ করে, তবে তাঁদের সর্বোচ্চ তিনমাসের জেল এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ইনস্পেক্টর-কাম-ফেসিলিটেটর নামে একটি নতুন পদ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে, যাঁর দায়িত্ব হবে কর্মক্ষেত্রে কোনও দুর্ঘটনার তদন্ত করা। আঘাত বা রোগের কারণ হতে পারে, কর্মস্থলকে এমন বিপজ্জনক জিনিস থেকে মুক্ত রাখতে হবে। কর্মীদের জন্য বার্ষিক স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করা, কর্মীদের নিয়োগপত্র দেওয়া, কর্মস্থলে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর মতো বিষয়গুলি নতুন শ্রমবিধিতে রাখা হয়েছে। এই সংক্রান্ত বিধি অমান্য করলে সর্বোচ্চ দু’বছর জেল এবং পাঁচ লক্ষ টাকা অবধি জরিমানা হতে পারে। সামাজিক সুরক্ষা বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিটিও কড়া করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকের কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প ঘোষণা করতে পারে। যেগুলি বর্তমানে আছে (পিএফ, পেনশন, ইএসআই) সেগুলি ছাড়াও নতুন স্কিম শ্রমিকদের আওতায় রাখতে হবে। এছাড়া নতুন শ্রমবিধি অনুযায়ী, সাতজন একত্রে হলেই ট্রেড ইউনিয়নের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা যাবে, তবে সংস্থার মোট শ্রমিকের অন্তত ১০ শতাংশ বা ১০০ জন শ্রমিক (যে সংখ্যাটি কম হবে) একত্রে ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে নথিভুক্ত করার আবেদন করলে তাঁদের সেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে।


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post