চার বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করা কলিতা মাঝি আউশগ্রামের বিজেপি প্রার্থী


 

 

 একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে তারকা ও হেভিওয়েট প্রার্থীদের ছড়াছড়ি, সেখানে এমন কয়েকজন টিকিট পেয়েছেন যারা নতুন করে ভাবতে বাধ্য করাচ্ছেন আম জনতাকে। যেমন পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের বিজেপি প্রার্থী কলিতা মাঝি। ধুলোমাখা এক চিলতে মাটির বাড়ি, তাতেই স্বামী, সন্তান, দুই দেওর ও শশুর শ্বাশুড়ি নিয়ে সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা সংসারে। অগত্যা কলিতা মাঝিকে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করতে হয়। হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন, বিজেপির মতো সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পেশা লোকের বাড়ির পরিচারিকা। ফলে তাঁর একটা সমস্যা হচ্ছে, সকাল সকাল প্রচারে যেতে। কারণ কয়েকটি বাড়ির কাজ সেরে তাঁকে বেরোতে হচ্ছে প্রচারে। যে গ্রামে তিনি থাকেন, সেই প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও সেভাবে প্রবেশ করেনি স্মার্টফোন, ফেসবুক, টুইটার। তবে ওই গ্রামের বাসিন্দা বিজেপি প্রার্থীই এখন সোশ্যাল মিডিয়ার কৌতূহল। 


তফসিলি জনজাতির জন্য সংরক্ষিত আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রেই বিজেপি টিকিট দিয়েছে কলিতা মাঝিকে। আউশগ্রামের গুসকুরা পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কলিতাদেবী। স্বামী সুব্রত মাঝি কলের মিস্ত্রি, একমাত্র ছেলে পার্থ অষ্টমশ্রেণীর পড়ুয়া। স্বামীর উপার্জন কম, তাই সংসার চালাতে কলিতা স্থানীয় চার বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। আপাতত দলের অনুরোধে ওই বাড়িগুলি থেকে ছুটি পেয়েছেন তিনি। 


মঙ্গলকোটের কাশেমবাজারে বাপের বাড়ি কলিতার। বাবা ছিলেন দিনমজুর, তাই দারিদ্রতা দেখেছেন ছোটবেলা থেকেই। তাই পড়াশোনাও করতে পারেননি বেশিদূর পর্যন্ত। স্বামীর ঘরে থাকাকালীন ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন কলিতা মাঝি। এবার প্রার্থী হয়েই প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন, তাঁর বক্তব্য, জিতলে সকলের জন্য কাজ করব। তাঁর কথায়, ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করেছি, তাই কষ্ট কি জিনিস বুঝি, জিতলে এই এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করব। 

রাজ্যের শস্য ভান্ডার বলে পরিচিত বর্ধমান। কিন্তু দারিদ্রতাই এই অঞ্চলের প্রধান ইস্যু। ফলে কলিতা মাঝির মতো একজনকে টিকিট দিয়ে বিজেপি সমাজের কাছে একটা বড় বার্তা দিয়েছে। বিজেপির আশা, এখানে জিতবেও তাঁরা। আউশগ্রাম একসময় বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে আসনটি ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। জেতেন তৃণমূলের অভেদনন্দ থান্ডার। এবারও তিনিই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী আউশগ্রামে। ফলে লড়াইটা খুবই কঠিন বিজেপির সামনে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে কলিতা মাঝিকে প্রার্থী করে বিজেপি কোনও চমক দেয়নি। গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাজনীতি যারা বোঝেন, তাঁদের কাছে এটাই মাস্টারস্ট্রোক। গ্রামের জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো জীবনযাত্রা বিজেপি প্রার্থীর, যা প্রচারে ও ভোটারদের প্রভাবিত করবে। এখন দেখার লোকের বাড়ি কাজ করা, দারিদ্রতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করা আউশগ্রামের বিজেপি প্রার্থী কলিতা মাঝি জিতে চমক দিতে পারেন কিনা।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post