নজরে ভাটপাড়াঃ অর্জুনের সঙ্গেই ‘ছায়াযুদ্ধ’ বাকি প্রার্থীদের

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অর্জুন সিং। তিনি ভাটপাড়া বিধানসভার বিধায়ক এবং ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাটপাড়া-জগদ্দল এলাকায় অন্যতম প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি দলবদল করেন। জানা যায়, লোকসভা ভোটে তিনি ব্যারাকপুর থেকে টিকিট চান। সেটা নিয়ে মনমালিন্য হওয়ায় তিনি বিজেপিতে যোগ দেন এবং বিজেপির টিকিটে ব্যারাকপুর লোকসভায় জিতে আসেন। 


এই ঘটনার সঙ্গেই আরেকটি ঘটনা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া এলাকায় ঘটতে থাকল। সেটা হল রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা। যা পরবর্তী প্রায় মাস তিনেক ধরেই সংবাদ শিরোনামে ছিল। বোমাবাজি, গোলাগুলি, মৃত্যু ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া অঞ্চলে যেন জলভাতে পরিনত হয়েছিল। সেই পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তাই একুশের নির্বাচনে রাজ্যবাসীর নজর থাকবে ভাটপাড়ার দিকে। এবারেও এখানে বিজেপি প্রার্থী পবন সিং। আর সিপিএম থেকে তৃণমূলে আসা জিতেন্দ্র সাউকে টিকিট দিয়েছে শাসকদল। সংযুক্ত মোর্চার তরফে এখানে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে ভাটপাড়ায়। টিকিট পেয়েছেন ধর্মেন্দ্র সাউ। মূলত অবাঙ্গালি অধুষ্যিত এই অঞ্চলের মূল ইস্যু যদিও বন্ধ চটকল। তবুও সংখ্যালঘু ভোটই এখানে ‘এক্স ফ্যাক্টর’। 


অর্জুন সিংয়ের বাবা সত্যনারায়ন সিং কংগ্রেসের বড় নেতা ছিলেন। তিনি ভাটপাড়া বিধানসভায় তিনবারের বিধায়ক ছিলেন। ২০০১ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে প্রথমবার বিধানসভায় যান অর্জুন সিং। সেবার তৃণমূল কংগ্রেসের মাত্র কয়েকজন বিধায়কই জিতেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অর্জুন সিং। এরপরই তিনি ভাটপাড়া পুরসভাও বামফ্রন্টের হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। তাঁকেই পুরসভার চেয়ারম্যান করেন তৃণমূল নেত্রী। এরপর ২০০৬, ২০১১ এবং ২০১৬ বিধানসভা ভোটেও তিনি ভাটপাড়া থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু তাল কাটল ২০১৯ সালের লোকসভার আগে। দলের সঙ্গে মনমালিন্যে দল ছাড়লেন আর্জুন, যোগ দিলেন বিজেপিতে। ফলে ভাটপাড়া এলাকায় রাজনৈতিক বিন্যাশ বদলে যায়। উনিশের লোকসভায় বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হন অর্জুন, আর ছেলে পবন সিংকে উপনির্বাচনে ভাটপাড়া থেকে জিতিয়ে বিধানসভায় পাঠান। 

একুশের ভোটেও ভাটপাড়ায় বিজেপি টিকিট দিয়েছে অর্জুন পুত্র পবন কুমার সিংকে। উনিশের উপনির্বাচনে ভাটপাড়ায় তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন মদন মিত্র। কিন্তু জনপ্রিয় এই নেতাও জিততে পারেননি। ভাটপাড়ায় এবার তৃণমূল টিকিট দিয়েছে জিতেন্দ্র সাউকে। যিনি ২০১৬ বিধানসভায় অর্জুনের বিপক্ষে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ছিলেন। অর্জুন তৃণমূল ছাড়ার পরই জিতেন্দ্র যোগ দেন তৃণমূলে। আর এবার তাঁকেই ভাটপাড়ায় ভোটের ময়দানে নামিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি কি আদৌ পারবেন অর্জুনের চক্রব্যুহ ভেদ করতে? উত্তর মিলবে আগামী ২ মে। কিন্তু বিগত বিধানসভা, এবং গত লোকসভা নির্বাচনের নিরীখে এখানে অর্জুনের প্রভাব যথেষ্ঠই প্রবল। বিগত ভোটের ফলে তা স্পষ্ট।


 ২০১৬ বিধানসভায় অর্জুন সিং পেয়েছিলেন ৫৯,২৫৩ ভোট, এবং নির্দল প্রার্থী জিতেন্দ্র সাউ পেয়েছিলেন ৩০,৩১৮ ভোট। ফলে অর্জুনের জয়ের ব্যবধান ছিল ২৮,৯৩৫ ভোটের। উনিশের উপনির্বাচনে পবন সিং জিতেছিলেন ২৩,১০৪ ভোটে। আর ওই বছরের লোকসভা ভোটের ফলের নিরীখে ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং ভাটপাড়া থেকে পেয়েছিলেন ৬৪,৬৮০ ভোট আর তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী পেয়েছিলেন  ৩৪,৯৭৩ ভোট। অর্থাৎ ভাটপাড়ায় অর্জুনের ব্যবধান ছিল ২৯,৭০৭ ভোটের। সবমিলিয়ে এবারও ভাটপাড়ায় পবন সিং অনেকটাই এগিয়ে। এই পরিসংখ্যানে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল অর্জুন সিং যে দলেই থাকুন না কেন, জয় তাঁরই হয়েছে। তৃণমূলের সময়ও যে দাপট ছিল, বিজেপিতে গিয়েও সেই দাপুটে জয়। ব্যবধান প্রায় একই থেকে গিয়েছে।


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post