শুধু ভোট বলে চেপে যাচ্ছি, নাহলে দেখে নিতাম, হুঙ্কার মমতার

মঙ্গলবার শেষ হয়েছে দ্বিতীয় দফার ভোট প্রচার। গত তিনদিন ধরেই নন্দীগ্রামে রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত ভোট পর্যন্তই তাঁর নন্দীগ্রামে থাকার কথা। আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোট নন্দীগ্রামে। কিন্তু বসে নেই তৃণমূল নেত্রী। এই ফাঁকে পাশের জেলা হুগলিতে দুটি প্রচারসভা সেরে নিলেন তিনি। একটি গোঘাটে অন্যটি জমি আন্দোলনের আতুরভূমি সিঙ্গুরে। জমি আন্দোলনের আরেক পীঠস্থান নন্দীগ্রামে তিনি নিজেই দাঁড়িয়েছেন এবার। লড়াই সেখানে সেয়ানে সেয়ানে। কম যায় না সিঙ্গুরও। সিঙ্গুর আন্দোলনের দুই পুরোধা এবার সিঙ্গুরে আমনে সামনে। একজন মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অন্যজন বেচারাম মান্না। দুজনেই সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

 

তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণারও পরে বিজেপি-তে যোগ দেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁকেই প্রার্থী করে বিজেপি পাল্টা চাল দিয়েছে। অপরদিকে বয়সের কারণ দেখিয়ে সিঙ্গুরের মাস্টারমশাইকে সরিয়ে এবার তৃণমূল টিকিট দিয়েছে বেচারাম মান্নাকে। নন্দীগ্রামের মতোই সিঙ্গুরও এবার নবান্ন দখলের জন্য অন্যতম বড় মঞ্চ। তাই বুধবার নন্দীগ্রামে প্রচার না থাকায় তৃণমূল নেত্রী হাজির হচ্ছেন সিঙ্গুরে। এদিন নিজের ভাষণে মমতা বললেন, সিঙ্গুরে আন্দোলন করে জয় এনেছিলাম। কৃষি আন্দোলনের প্রাণ কেন্দ্র এটাই। এখান থেকে নন্দীগ্রামে গিয়েছে সেই আন্দোলনে। অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছি, মাসে মাসে ভাতাও দিচ্ছি। সিঙ্গুর নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানালেন সিঙ্গুরের মাটি থেকেই। এদিন তিনি বলেন, এখানে ১১ একর জমি বেছে রেখেছি। সেই সরকারি জমিতে শিল্প হবে। অনেক অনেক চাকরি হবে। বারুইপাড়া পানীয় জল প্রকল্প হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় পৌঁছে যাবে পানীয় জল।

তিনি আরও বলেন, সিঙ্গুরের কৃষক আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকেও রেখেছি আমরা। সকলের জানা উচিত কী হয়েছিল সেই সময়। সিঙ্গুরের বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে নিয়েও এদিন মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘মাস্টারমশাই (রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য) কীভাবে বিজেপিতে গেলেন ভাবতে পারছি না। ওঁকে চারবার জিতিয়েছি আমরা। ওঁর বয়সকে আমি সম্মান করি। বলেছিলাম আপনি আমাদের উপদেষ্টা দলে থাকবেন। বেচারাম এখানের স্থানীয় ছেলে ও পাঁচ বছর কাজ করুক। মাস্টারমশাইকে আমি আজও সম্মান করি’। বিজেপিকে আক্রমণ করে এদিন সুচতুরভাবে বিজেপির পুরোনো কর্মীদের ক্ষোভ আরও উসকে দিতে চাইলেন তৃণমূল নেত্রী। বললেন, ‘লকেট বেচারা সাংসদ। ওঁকে পদ কমিয়ে বিধায়ক দিচ্ছে।ছিল বাঘ হল বেড়াল। এরপর হবে ইঁদুর। পুরোনো বিজেপি কর্মীরা কেঁদে কেঁদে মরছে। গদ্দারদের নিয়ে কি আর বাংলা জেতা যায়? ধার চাহিয়া তাই আর লজ্জা দিবেন না।অনেক লজ্জা পেয়েছে বাংলা’।


এর আগে বুধবার গোঘাটের জনসভায় মমতা বলেন, ‘সংখ্যালঘুরা নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি করবেন না। হায়দরাবাদ থেকে একটা বিজেপির দালাল (মিম) এসেছে। আর ওই দালালদের মধ্যে ফুরফুরা শরিফের সবাই নয়, একটা ছেলে টাকা নিয়ে বসে আছে বিজেপির থেকে। গদ্দার, গদ্দার, বড় বড় গদ্দার। এই গদ্দারদের ভোট দিয়ে নিজেদের ভোট ভাগাভাগি করবেন না’। পাশাপাশি নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর নাম না নিয়েই তিনি তীব্র আক্রমণ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘বলরামপুরে গিয়েছিলাম। আমার গাড়িতে হামলা করছে। গাড়িতে দুমদাম মারছে। এত সাহস! শুধু ভোট বলে চেপে যাচ্ছি। তা না হলে দেখে নিতাম কার কতবড় চেহারা’। পাশাপাশি এও বলেন, নন্দীগ্রামের বলরামপুরে আমাদের একটা ছেলেকে এমন মেরেছে যে সে বাঁচবে কিনা জানি না। এলাকায় অত্যাচার করেছে। এর পেছনে যারা রয়েছে তাদের একসময় আমি দুধ কলা দিয়ে পুষেছিলাম। ভোটে দাঁডি়য়েছিস। লড়াই কর না! এখন দেখার সিঙ্গুর থেকে তিনি কি বার্তা দেন।
 

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post