৫৬তম বিবাহবার্ষিকীতে ফের ছাদনাতলায় ‘সত্তরোর্ধ’ রায় দম্পতি

দীর্ঘ ৫৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর আজও অটুট ভালোবাসার বন্ধন। আশি ছুঁইছুঁই রিলীপ কুমার রায় এবং সত্তোরের কাছাকাছি গৌরী রায়, আজ থেকে পঞ্চান্ন বছর আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। সত্তোরর্ধো এই রায় দম্পতির নতুন করে চার হাত এক হল শনিবার রাতে। আর এই ব্যাতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী থাকলেন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহরের মিলনপাড়ায় বাসিন্দারা। ছেলে মেয়ে নাতি নাতনিদের নিয়ে ভরা সংসার রিলিপবাবু ও গৌরি দেবীর। তাঁদের ৫৬তম বিবাহবার্ষিকীর দিনটি তাঁরা পালন করলেন অনেকটাই অন্যরকমভাবে। রীতিমতো বর-কনে সেজে ফের সুসজ্জিত ছাদনাতলায় বসলেন। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণে শুভদৃষ্টি, সাতপাকে ঘোরা, মালাবদল এমনকি যজ্ঞাহুতি ও সিঁদুর দান সবটাই হল ধাপে ধাপে। শুধু ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়াই নয়, শনিবার রাতে খাওয়া দায়ওয়ায় সামান্য আয়োজন ছিল। যদিও রবিবার পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনদের প্রীতিভোজের আমন্ত্রণ রয়েছে রায় বাড়িতে। কারণ শনিবার তাঁদের নিরামিষ খাওয়ার রীতি। তাই মূল ভোজ রবিবার, জানিয়ে দিলেন রিলীপবাবুর নাতনী মৌমিতা দাস।  

কেন এই ব্যাতিক্রমী আয়োজন? রায় পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, মূলত সোশাল মিডিয়ার থেকেই এই উদ্যোগের কথা মাথায় আসে। আজকালকার দিনে বয়স্ক মানুষেরাই মূলত অবহেলিত। কিন্তু আমরা সেটা হতে দিই নি। আর সমাজে যাতে এই বয়স্কদের প্রতি অবহেলা কমে তার জন্যই এই উদ্যোগ। বৃদ্ধ দম্পতির নব বিবাহ অনুষ্ঠানে তাই নাতি-নাতনীদের আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো। এই করোনা কালেও কোভিডবিধি মেনে ধুমধামে বিয়ের পিড়িতে বসালেন দাদু-ঠাকুমাকে। আর পুরো অনুষ্ঠানে আপ্লুত আশি ছুঁইছুঁই বর বেশে রিলীপবাবুও। তাঁর কথায়, ‘নাতি নাতনিরা সবাই আনন্দ করছে, ওদের আনন্দই আমাদের আনন্দ’। সলজ্জ মুখে বিয়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন নববধূর বেশে গৌরী দেবীও। তিনিও বললেন, নাতি-নাতনীদের কথা। 

আর এই অভিনব বিয়ের পুরোহিত শঙ্কর চক্রবর্তী বললেন, আগে অনেক বিয়ে দিয়েছি, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। তিনি আরও বলেন, বাবা মাকে যারা অবহেলা করে তাদের শিক্ষার জন্য এই বিয়ের অনুষ্ঠান বার্তাবহ হয়ে থাকবে। অবাক পাড়া-প্রতিবেশীরাও। তাঁরাও অনেকে ভিড় জমিয়েছিলেন রায়গঞ্জের রায় বাড়িতে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post