নেতাজি প্রতিষ্ঠিত স্কুলে জবরদখলের অভিযোগ

এবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় দখলদারির অভিযোগ উঠল। ১৯১৩ সালে কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন কিশোর সুভাষচন্দ্র বসু। সেসময়ই কৃষ্ণনগরের কলেজ স্ট্রিটে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে শিক্ষাদানের জন্য উদ্যোগ নিয়ে একটি নৈশ বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন। সেই বিদ্যালয়ে কবি নজরুল ইসলাম থেকে বহু বরেণ্য মানুষের পদধূলি পড়েছে। নেতাজির প্রতিষ্ঠিত সেই বিদ্যালয়ের জমি আজ বেদখল হচ্ছে। তাঁর জন্মদিবসের আগে আপামর বাঙালির কাছে এ ধরণের ঘটনা নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত বলছেন সাধারণ মানুষ। কৃষ্ণনগর পুর এলাকার এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কৃষ্ণনাগরিকরা। ঘটনা প্রসঙ্গে পুরপ্রশাসক তথা সদর মহকুমা শাসক চিত্রদীপ সেন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। যদি দখল হয়ে থাকে যত শীঘ্র সম্ভব দখলমুক্ত করা হবে। জানা যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন ওড়িশার কটকের র‌্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক বেণীমাধব দাসকে। তাঁর প্রিয় এই শিক্ষককে ওড়িশা থেকে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে বদলি করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। বেণীমাধব দাসের টানে কিশোর সুভাষচন্দ্র বসু কৃষ্ণনগরে আসেন।

কৃষ্ণনগরে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় স্বাধীনতা সংগ্রামী হেমন্ত সরকারের সঙ্গে। তাঁরা কিছু মানুষকে নিয়ে ১৯১৩ সালে কৃষ্ণনগরের কলেজ স্ট্রিটে শ্রমজীবী মানুষের জন্য একটি নৈশ বিদ্যালয় শুরু করেন। সেখানে স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু পড়াতেন। জমির মালিক দেবেন্দ্রনাথ সেন-ই নৈশ বিদ্যালয়ের প্রথম সম্পাদক হন। এই নৈশ বিদ্যালয়ের নাম পরবর্তীকালে নেতাজি ভবন নামে খ্যাতি হয়। এই স্কুলটিতে একসময় ছোটদের পড়ানোও হয়। পরে বন্ধ হয়ে যায়। আট কাঠা জমির ওপর হওয়া এই স্কুলটি কৃষ্ণনগর পুরসভার অধীনে ছিল। ১৯৮৯ সাল সালে কৃষ্ণনগর পুরসভা নেতাজি অনুধ্যায়ন কেন্দ্র নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এই বাড়িটির দেখভালের দায়িত্ব দেয় শহরের কিছু শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ| 

বাড়িটি দেখার সঙ্গে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ও বিভিন্ন আলোচনাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। এই সংস্থাটি পুরসভাকে খাজনাও দেয়। তবে পুরসভা সূত্রে জানাগিয়েছে, ওই বাড়িটি এখনও পুরসভার অধীনে আছে। বর্তমানে বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাব দেখা দিয়েছে। বাড়ির জমির উত্তর দিকের তিনজন বাসিন্দা পশ্চিমদিকের পাঁচিলের বেশ কিছুটা ভেঙে নিজেদের মতো দেওয়াল দিয়েছেন। বাড়িটি ভগ্নদশা হলেও কিছুদিন আগে সারানো হয়েছে। অনুধ্যান সংস্থার খগেন দত্ত বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে থানা, পুরসভা, জেলা প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। তাও এখনও দখলমুক্ত করা যায়নি। আমরা বলছি দখলমুক্ত করে ওখানে নেতাজি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক। ঘটনা প্রসঙ্গে প্রাক্তন পুরপ্রধান বর্তমানে পুরপ্রশাসক অসীম সাহা বলেন, যিনি দখলদারির অভিযোগ করছিলেন তিনিই দখলদারি করতে চাইছিলেন। তবে ঘুরিয়ে কার্যত ওখানে যে দখলদারি হয়েছে সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সংস্কার করেছি। আর মানুষের স্বার্থেই পুরসভা। তাই এক ফুট বাড়িয়ে ওখানে রাস্তা করা হয়েছে।


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post