৩৫৬ বছর আগে ইংল্যান্ডের এই গ্রামেই হয়েছিল প্রথম ‘লকডাউন’

১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দ, গোটা ইংল্যান্ড জুড়েই ভয়াবহ মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল সেবার। মহামারি হয়েছিল প্লেগের জন্য। ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের একটি ছোট্ট গ্রাম ইয়ামে তখনও ছড়িয়ে পড়েনি প্লেগ মহামারি। ৩৫৬ বছর আগে এই গ্রামের মানুষজন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাস খুঁজে একদল গবেষক এক অবাক করা তথ্য সামনে এনেছেন। কী সেই তথ্য? 

সেই ৩৫৬ বছর আগে ইংল্যান্ডের এই গ্রামেই হয়েছিল লকডাউন। কি অবাক হচ্ছেন তো? হ্যাঁ, এটাই সত্যি, ইয়াম গ্রামের সবাই গ্রামের সীমানা আটকে নিজেদের ঘরবন্দি করেছিলেন। বাইরের জগতের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন ইয়াম গ্রামের বাসিন্দারা। ফলে সেবার মহামারি প্লেগ ইয়াম গ্রামে সুবিধা করতে পারেনি। তাই আজও এই গ্রামকে প্লেগ গ্রাম নামেই পরিচিত। ফলে বলাই যায়, এই গ্রামই গোটা বিশ্বকে লকডাউনের অর্থ শিখিয়েছিল, তাও সেই সাড়ে তিনশো বছর আগে। 

ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ার কাউন্টির পিক জেলার জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত এই ইয়াম গ্রাম। বর্তমানে করোনা ভাইরাসকেও জয় করে ফেলেছে এই গ্রাম। এখন এই গ্রামের জনসংখ্যা মাত্র ৯৬৯ জন। সাড়ে তিনশো বছর আগে ইংল্যান্ডের এই প্রত্যন্ত গ্রামে হানা দিয়েছিল প্লেগ মহামারি। জানা যায়, এক কাপড়ের ব্যবসায়ীর মাধ্যমেই এই গ্রামে ঢুকে পড়ে প্লেগের জীবাণু। এরপর একে একে এই গ্রামের অনেকের শরীরেই প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। মৃতদের মধ্যে ওই কাপড়ের ব্যবসায়ীও ছিলেন। এরপর ওই গ্রামে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়। তখনই ইয়াম গ্রামের প্রধান এক অভিনব উপায় বার করেন। গ্রামের সকলকে ডেকে তিনি বলেন, গ্রামের সীমানা বন্ধ করে দিতে এবং সকলকে গৃহবন্দি করে দিতে। ফলে মারাত্মক ছোঁয়াচে প্লেগ আর ছড়িয়ে পরতে পারবে না। সকলেরই মনে ধরে এই প্রস্তাব। রাতারাতি গ্রামটি আশেপাশের গ্রামের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। যা কার্যত আজকের সভ্যতার ‘পূর্ণ লকডাউন’। গ্রামের সকল বাসিন্দাই গ্রাম প্রধানের যুক্তি মেনে গোটা গ্রামকেই আইসোলেশনে রাখে। ফলে মহামারি প্লেগও হার মানে এই গ্রামের বাসিন্দাদের জেদের কাছে। 

সাড়ে তিনশো বছর আগের সেই লকডাউনে গ্রামের লোকেরা খেতেন কী? জানা যায়, অর্থের বিনিময়ে গ্রামের বাইরে অন্যান্য গ্রামের ব্যবসায়ীরা খাবার ও জল রেখে যেতেন। আর টাকা ও খাদ্য সামগ্রী জীবাণুমুক্ত করার জন্য জলের সঙ্গে ভিনিগার মেশাতেন ইয়াম গ্রামের বাসিন্দারা। জানা যায়, প্রায় একবছর এভাবেই গৃহবন্দি বা কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের বাইরে তৎকালীন গ্রাম প্রধান উইলিয়াম মমপেসন্সের নামে একটি পাঁচিল আজও অক্ষত। এটিই এখন পর্যটকদের কাছে মুখ্য আকর্ষণ। এছাড়া ওই কাপড়ের ব্যবসায়ী যিনি এই গ্রামে প্রথম প্লেগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁর বাড়িটিও আজ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। যেটিকে ‘প্লেগ কটেজ’ নামে সংরক্ষণ করা হয়েছে। 


Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post