‘কৌশলী’ মমতার চালেই মাত গেরুয়া শিবির?


উনিশে হাফ, একুশে সাফ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই এই স্লোগানকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি।  সে বছর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি অভাবনীয় ফল করে এরাজ্যে। ফলত একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশ উজ্জীবিত ছিল দল। যদিও সে সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মত ছিল, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরোধী শূন্য করার রাজনীতি ও সন্ত্রাস এবং বামেদের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার ডিভডেন্ট পায় বিজেপি। তবে কারণ যাই হোক, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিল গেরুয়া শিবির। 

নির্বাচনের পর প্রায় প্রতিটি বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই ইঙ্গিত ছিল তৃণমূলের ক্ষমতায় ফেরার। তবে দল ২০০-র বেশি আসন পেতে পারে এমন আভাস ছিল না কোনও সমীক্ষাতেই। যদিও স্পষ্ট ছিল, বিজেপির ১০০ আসন পার করার বিষয়টি।  কিন্তু চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হতেই দেখা গেল, ২১৩টি আসন দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মিথ্যে হয়ে যায় বিজেপির ২০০ পার করার দাবি।  অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যৎ বাণী। রাজ্যে ১০০ আসনের গণ্ডিও পার করতে পারেনি বিজেপি,আটকে যায় ৭৭-এ। 

প্রশ্ন উঠছে কোন ‘মন্ত্রবলে’ সব বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল প্রমাণিত হল,কী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা? অনেকেই বলছেন, বিজেপির ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মেরুকরণকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলার মানুষ। তাই সিএএ, এনআরসির মতো ইস্যু থাকলেও অসমে বিজেপি যে সাফল্য পেয়েছে, বাংলায় তা সম্ভব হয়নি।  ভোটপ্রচারে বিজেপির বিরুদ্ধে বহিরাগত তত্ত্ব খাড়া করে প্রায় প্রতিটা সভা থেকেই সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা বিজেপির মেরুকরণের প্রয়াসকে পর্যুদস্ত করেছে। এঅবস্থায় সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়ে মমতার ভোট ভাগ না হতে দেওয়ার বার্তায় নিশ্চিতভাবে সুফল পেয়েছে দল।            

তাছাড়া অনেকেই মনে করছেন, দুর্নীতি ছাড়া মমতা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারে তেমন কোনও ইস্যু ছিল না বিজেপির কাছে। মুখে সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিলেও, ছিল না সার্বিক উন্নয়ন বা কর্মসংস্থান নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও বার্তা। তাই সেক্ষেত্রেও রাজ্যের একাধিক সরকারি প্রকল্পের সামনে বেসামাল হয়েছে মোদী, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের ভোটপ্রচার।  ভোটের মুখে দল বদল করে বিজেপির প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিকেও মেনে নিতে পারেননি বাংলার রাজনৈতিক সচেতন মানুষ। ফলত নির্বাচনে হারতে হয়েছে তাদের অধিকাংশকেই। যদিও ফলাফল বলছে, এক্ষেত্রে বামেরা ভোট কাটায় ব্যবধান কম হলেও নিশ্চিত হয়েছে তাদের হার।  

এছাড়া রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুকে এই নির্বাচনে সঠিকভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছে শাসক দল। যা নিয়ে পথেও নামতে দেখা গেছে তৃণমূল নেত্রীকে। হেঁশেলে মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে নির্বাচনী প্রচার থেকে তাদেরকে হাতা-খুন্তি নিয়ে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মহিলাদের ৫০০ টাকা করে হাত খরচ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যালোচকদের মতে, অন্যদিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার বেসরকারিকরণ কিংবা করোনা নিয়ন্ত্রণে মোদি সরকারের ভূমিকা অনেকটাই ব্যাকফুটে নিয়ে গেছে বিজেপিকে।

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post