জোট গড়েই কি বিধানসভার বাইরে বাম-কংগ্রেস ?

রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক মেরুকরণকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে। একুশের নির্বাচনে বারেবারে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে বামেদের তরফে। নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এবার শুরু থেকেই প্রচারে সোশাল  মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে লালশিবির। প্রচারে জায়গা করে নিয়েছে টুম্পা সোনার প্যারোডি। প্রার্থী নির্বাচনেও এবছর তরুণ ব্রিগেডকে সামনের সারিতে এগিয়ে দিয়েছে দল। মমতার জমি আন্দোলনের খাসতালুক সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামেও কর্মসংস্থানের ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসতে মরিয়া ছিল তারা। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে সিপিআইএম প্রার্থী করেছে তরুণ তুর্কী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও সৃজন ভট্টাচার্যকে। নিজেদের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার কথা বিচার করে নির্বাচনের আগেই যুযুধান দুই শিবিরকে পরাস্ত করতে কংগ্রেস ও আইএসএফকে সঙ্গে নিয়ে জোট তৈরি করে। প্রচারে হাতিয়ার করা হয় তৃণমূলের দুর্নীতি ও নেতাদের দল বদলের প্রবণতা কিংবা বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের মতো ইস্যুকেও। 

কিন্তু রবিবার ভোটের ফল ঘোষণা হতেই চরম অস্বস্তিতে বাম-কংগ্রেস। স্বাধীনতার পর এই প্রথম রাজ্য বিধানসভা বাম ও কংগ্রেস শূন্য। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাইনবোর্ডের তকমা নতুন নয়, এবারের নির্বাচনের ফলাফলে বামেদের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। কেরলে যেখানে নজির গড়ে পরপর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেছে এলডিএফ(বামজোট), সেখানে বাংলায় বামেদের এই ভরাডুবির কারণ কী? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অতীতে দীর্ঘ সময় রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস ছিল যুযুধান দুই শিবির। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে দুর্বল কংগ্রেসের হাত ধরাধরি করার প্রবণতা যে বামেদের বাড়তি সুবিধা দিতে পারেনি তা ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেই প্রমাণিত। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভেস্তে যায় বাম-কংগ্রেসের সমঝোতা। আর এবার বিজেপি-ভীতিকে কাজে লাগিয়ে পুনরায় সংখ্যালঘু ভোটকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা আদৌ বাস্তবসম্মত ছিল না। এক্ষেত্রে মমতাতেই আস্থা রেখেছে সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বীদের পাশাপাশি জোটে আইএসএফকে সঙ্গী করায় দলের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহু বামমনষ্ক মানুষও। অন্যদিকে একাধিক তরুণ ব্রিগেডকে সামনে রেখে জোটের কর্মসংস্থানের স্লোগানও দাগ কাটতে পারেনি সাধারণ মানুষের মনে। রাজ্যে এই মূহূর্তে বাম-কংগ্রেসের রাজনৈতিক শক্তিই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

অনেকেই বলছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে বামেরা পথে থাকলেও ইদানিং অনেক সময় তাদের আন্দোলন খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। একই মত, অনেক বাম-সমর্থকেরও। আর এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে তরুণ প্রজন্মকেও সামনে এনেও রাজ্যে সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে ছিটকে যেতে হল বামেদের। একই অবস্থা কংগ্রেসের। উল্টে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ডিভিডেন্ট ঘরে তুলল আব্বাস সিদ্দিকীর আইএসএফ। বিধানসভায় দলের তথা জোটের একসাত্র প্রতিনিধি নওসাদ সিদ্দিকী।             

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post