অপরূপ মুরুদেশ্বরের কৈলাশপতি মহাদেব এবং স্কুবা ডাইভিং

ভারতর্ষে সমুদ্রের অতলে স্কুবা ডাইভিংয়ের (SCUBA diving) এর খুব একটা প্রচলন নেই। ওই আন্দামান বা লক্ষ্বদীপেই যত টুকু হয়। তবে আজকের তরুণ প্রজন্ম অনেকটাই দুঃসাহসিক। অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম আজকাল দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই স্কুবা ডাইভিং করতে অনেকেই ছোটেন ভারতের পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ অথবা পশ্চিমপ্রান্তের আরব সাগরের বুকে লক্ষ্বদীপে। কিন্তু কুবা ডাইভিং বা স্মরকেলিং করতে যেতেই পারেন আরেকটি অসামান্য সুন্দর গন্তব্যে। যা এখনও ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে কথা দিতে পারি জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর এবং পর্যটনের জন্য স্বর্গরাজ্য বলা চলে। একদিকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা,অন্যদিকে আরব সাগর এরই মাঝে মুরুদেশ্বর। কর্ণাটকের উত্তর কন্নড় জেলার ভাটকল তালুকের অন্তর্গত।  মুরুদেশ্বরের থেকে ১৫ কিমি দূরে মূলত তিন দিক সমুদ্রে ঘেরা একটি দ্বীপ হল নেত্রানী। যা পিজিয়ন আইল্যান্ড নামেও পরিচিত। মুরুদেশ্বর থেকে এখানে পৌঁছাতে কমবেশি ঘন্টা দেড়েক সময় লাগে। এই দ্বীপই বর্তমানে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস এবং স্কুবা ডাইভিংয়ের স্বর্গরাজ্য। এছাড়া মুরুদেশ্বরের সমুদ্র সৈকত এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিব মূর্তির আকর্ষণ তো আছেই। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক মুরুদেশ্বর ও নেত্রানী ঘোরার খুঁটিনাটি।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবমূর্তি এবং মন্দিরের গোপুরম

মুরুদেশ্বর—

আরব সাগরের পারে অসাধারণ সুন্দর শৈবতীর্থ মুরুদেশ্বর। এখানে এক দুই দিন অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায়। কর্নাটকের গুরুত্বপূর্ণ শহর মেঙ্গালুরু থেকে ৬৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গোকর্ণ যাওয়ার পথেই পড়বে মুরুদেশ্বর। এখানকার মূল আকর্ষণ হল কৈলাসপতি মহাদেবের বিশাল শিবমূর্তিটি। যার উচ্চতা ১২৩ ফুট। সমুদ্রের পারেই তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিবমূর্তিটি। যেটি বহু দূর থেকেই দেখা যায়। নীল জলরাশির ব্যাকগ্রাউন্ডে শিবমূর্তিটি অসাধারণ সুন্দর। বিশ্বের বৃহত্তম শিব মন্দিরটি রয়েছে নেপালে, ফলে মুরুদেশ্বরের শিবমূর্তিটি ভারতের মধ্যে বৃহত্তম বলাই চলে। 


 আগেই বলেছি মুরুদেশ্বর হল শৈবতীর্থ। ফলে এখানকার আরেকটি বড় আকর্ষণ হল শিবমন্দিরটি। যা প্রায় ২০ তলা উঁচু, উচ্চতা ২৩৭.৫ ফুট। সমুদ্রের পারে কাণ্ডুকা পাহাড়ের শীর্ষে তৈরি হয়েছে মন্দিরটি। স্থানীয়ভাবে এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা শিবকে শ্রীমৃদেসা বলা হয়। শিবলিঙ্গটি অন্ধকার গর্ভগৃহে অবস্থিত, যা ভূগর্ভের প্রায় ২ ফুট নীচে রয়েছে। তবে এই গর্ভগৃহে সাধারণ ভক্তরা ঢুকতে পারেন না। প্রবেশদ্বার থেকেই প্রদীপের আলোয় শিবলিঙ্গের দর্শণ করতে হয়। এই কাণ্ডুকা পাহাড় এবং মুরুদেশ্বর শিব মন্দির নিয়ে রয়েছে নানান কিংবদন্তি। কথিত আছে, এখানেই শিবের দেওয়া শঙ্খের জলে স্নান করে পাপমুক্ত হন ভগবান শ্রী বিষ্ণু। আর সেই পবিত্র জলের স্পর্শে কাণ্ডুকা পাহাড় হয় শঙ্খতীর্থ। কাণ্ডুকা পাহাড়ের নীচেই আরও কয়েকটি মন্দির রয়েছে। যেগুলি হল রামেশ্বর লিঙ্গ মন্দির, শনেশ্বর মন্দির। 


 মুরুদেশ্বর শিব মন্দির চত্বরটি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সুন্দর সাজানো বাগান, ছড়ানো ছিটানো অসংখ্য মূর্তি এবং স্থাপত্য পার্কটিকে অত্যন্ত মনোরম করে তুলেছে। রীতিমতো পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপত্যগুলি। ফলে হাতে বেশ খানিকটা সময় নিয়েই ঘুরে দেখতে হয় মন্দির এবং সংলগ্ন পার্কটি। এছাড়া মন্দিরের গোপুরমের শীর্ষেও ওঠা যায় লিফটে করে। ফলে গোটা এলাকা এবং সমুদ্র সৈকতের অপূর্ব দৃশ্য আরও ভালো করে দেখা যায়।

সমুদ্রের অতলে স্কুবা ডাইভিং (SCUBA diving)

মুরুদেশ্বরে মন্দির ছাড়াও রয়েছে দুটি অনন্য সুন্দর সৈকত। কাণ্ডুকা পাহাড়ের দুপাশে দুটি সৈকত অবস্থিত। এখানে রয়েছে জলকেলী এবং অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের ঢালাও আয়োজন। সবুজ পাহাড় আর জঙ্গলের কোল ঘেঁষে সাদা বালির সুন্দর মানকি সৈকত ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে অনেকটাই আকর্ষণীয়। পাশাপাশি আরও সৈকতের মজা নিতে হলে আপনাকে যেতে হবে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে বাইলুর সৈকত। বাইলুর গ্রামটিও ঘুরে নিতে পারেন একই যাত্রায়। আর যারা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বা স্কুবা ডাইভিং করতে চান তাঁরা আগে থেকেই খোঁজখবর নিয়ে অনলাইনে বুকিং করে রাখবেন। পাশাপাশি মুরুদেশ্বর পৌঁছেও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে স্কুবা ডাইভিং করা যায়। তবে সব ক্ষেত্রেই কয়েকদিন প্রশিক্ষণ নিতে হবে। 



কিভাবে যাবেন?

ভারতের যে কোনো জায়গা থেকে মুরুদেশ্বর যেতে হলে মুম্বই, মেঙ্গালুরু (ম্যাঙ্গালোর) বা মাডগাঁওতে (গোয়া) ট্রেন বদল করে আসতে হবে। পাশাপাশি মুরুদেশ্বর থেকে গোকর্ণ ৭৮ কিমি এবং উদুপি কমবেশি ১০০ কিমি।









 

Post a Comment

Thank You for your important feedback

Previous Post Next Post